নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তবে একবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পূর্ণ মেয়াদকাল অতিবাহিত করতে পারেননি তিনি। এবার ফের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন দেশটির এই প্রবীণ নেতা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর দাবি, তিনিই এবার পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নেতা হবেন।
বিবিসি, গার্ডিয়ান এবং এএফপিসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, এবার যদি নওয়াজ প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন, তবে তা হবে আশ্চর্যজনক ঘটনা। খবর জিও নিউজের।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়া নওয়াজ শরিফ গত বছর লন্ডন থেকে ফিরে এসেছেন। এরপর থেকেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সব পথ পরিষ্কার করেন তিনি।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের মতে, পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) যদি ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ী না হয়, তাহলে বিষয়টি অবাক হওয়ার মতো হবে।
এদিকে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সপ্তাহে করাচিতে পাকিস্তানের বড় বড় ব্যবসায়ীদের এক সমাবেশে সাক্ষাত্কার নেওয়া অনেকেই বলেছেন, তারা আগামীতে একটি ঝুলন্ত সংসদ এবং একটি দুর্বল জোট সরকার দেখছেন।
বেশিরভাগই আশা করেন, এর নেতৃত্ব দেবেন নওয়াজ শরিফ বা তার ভাই শেহবাজ শরিফ, যিনিও একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের এক পররাষ্ট্রনীতি ফেলো মাদিহা আফজালের উদ্ধৃতি দিয়ে ব্লুমবার্গ বলছে, নওয়াজ যদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসেন, তাহলে তিনি দুটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন। একটি হচ্ছে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সমস্যা, বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং অন্যটি একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ঠিক করা।
সিএনএন বলছে, প্রচারণার ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে এগিয়ে আছেন ইমরান খানের দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষ নওয়াজ শরিফ। ৭৪ বছর বয়সি নওয়াজ শরিফ নির্বাসন থেকে ফিরে এসে ঐতিহাসিক রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের আশায় চতুর্থ মেয়াদে নেতা হিসেবে ফিরতে চাইছেন। তবে প্রবীণ এই নেতা প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী, নিহত সাবেক নেতা বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির কাছে শক্তিশালী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন।
সাবেক সিনিয়র ব্রিটিশ কূটনীতিক এবং কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক টিম উইলাসি-উইলসি বলেছেন, শরিফ অভিজ্ঞ। তিনি সবসময়ই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারদর্শী। তিনি ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাইবেন।
এপি রিপোর্ট করেছে, গত অক্টোবরে দেশে ফেরার পর আদালত তার দোষী সাব্যস্ত এবং কারাদণ্ডের রায় বাতিল করার কারণে চতুর্থ মেয়াদে ফেরার পরিষ্কার পথ রয়েছে নওয়াজের। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ইমরান খান কারাগারে থাকায়, ২০১৮ সালের নির্বাচন হারার ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য মঞ্চ তৈরি হয়েছে। ইমরান খান তখনই প্রধানমন্ত্রী হন, যখন নওয়াজ আইনি জটিলতায় ছিলেন। এবার ইমরান খান কারাগারে থাকায় বিশ্লেষকরা নওয়াজের আরেকটি জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন।
মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউট বলেছে, ভবিষ্যদ্বাণী হলো, নওয়াজ শরিফ এবং তার পিএমএল-এন ক্ষমতায় জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পিটিআই (পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ) যদি স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জয়ী হয়, তাহলে এটি হবে বিশাল আশ্চর্য এবং অলৌকিক ঘটনা।
ইউএস থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স বলেছে, পাকিস্তানের রাজনীতিতে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বেঁচে থাকা নওয়াজ শরিফ এবং তার দলের প্রধানমন্ত্রী হওয়া সশস্ত্র বাহিনীর সমর্থন আদায় করে সংসদের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার পথ পরিষ্কার করা হয়েছে। শরিফ এমন একজন ব্যক্তি যিনি তার নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং সামরিক বাহিনীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে নমনীয়।
স্পুটনিক রিপোর্ট করেছে, নির্বাচনের পর নতুন নেতাকে দেশের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকট এবং ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদের সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে। এই অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি, বিশেষ করে তার প্রতিবেশী এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অংশীদারদের সাথে এর সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে।