আত্মহত্যায় বাংলাদেশ ১০ম : ডব্লিউএইচও

তৌহিদুল ইসলাম
সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১

Share Now

আত্মহত্যা প্রবণতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দশম। বাংলাদেশে প্রতি বছর কমপক্ষে ১৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে।

শনিবার বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস-২০২১ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় ডব্লিউএইচওর এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল (ক্রিয়েটিং হোপ থ্রো অ্যাকশন) বা ‘কাজের মাঝে জাগাই আশা।

আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগের রেজিস্ট্রার, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রাইসুল ইসলাম পরাগ।

তিনি উল্লেখ করেন, পৃথিবীতে প্রতিবছর দশ লাখেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আত্মহত্যা প্রবণতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দশম। বাংলাদেশে প্রতি বছর কমপক্ষে ১৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে।

গত একযুগে প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ২০১৯-২০ করোনার সময়ে বাংলাদেশে আত্মহত্যা করছে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন। যাদের মধ্যে ২০ থেকে ৩৫ বয়সীরাই বেশি। বর্তমানে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের আত্মহত্যার পরিমাণ তিন গুণ।

এ সময় তিনি আত্মহত্যার কারণ ও প্রতিরোধে বিভিন্ন করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন।

হেলথ টিভি ও বীকন পয়েন্ট লিমিটেড এর যৌথ উদ্যোগে এবং অপসোনিন ফার্মা লিমিটেড, বায়োফার্মা লিমিটেড, হাই-টেক মডার্ণ সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, সিরিয়াস বিডি ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষতায় আয়োজিত এই আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন হেলথ টিভির চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা: মেজর (অব:) আব্দুল ওহাব মিনার।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউজিসির অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শব্দ সৈনিক ডেন্টিস্ট অধ্যাপক ডা: অরূপ রতন চৌধুরী, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও ইউএস বাংলা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ডা: মো: আজিজুল ইসলাম, বিশিষ্ট নাক, কান ও গলারোগ বিশেষজ্ঞ, সার্জন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফেলো অধ্যাপক ডা: মনিলাল আইচ লিটু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: নুজহাত চৌধুরী, আত্মহত্যা প্রতিরোধ সংগঠন সিরিয়াস বিডি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা: শর্মী আহমেদ ও মোহাম্মদ হানিফ প্রমুখ।

ড: মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান আত্মহত্যা প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, ‘হতাশা, গ্লানি, ব্যর্থতা কিংবা তীব্র অপমানের কারণে মানুষের মনে জন্ম নেয় একরাশ অভিমান। এমন পরিস্থিতিতে একসময় নিজেকে মূল্যহীন ভাবতে থাকে কেউ কেউ। বেঁচে থাকার উৎসাহ হারিয়ে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। হতাশায় থাকা ব্যক্তির প্রতি আমাদের দায়িত্ব আছে। অনেক সময় আমাদের একটু প্রচেষ্টাই একটি প্রাণকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে নতুন জীবন উপহার দিতে পারে। আত্মহত্যাকারীরা যখন নতুন জীবনে ফিরে আসেন তখন তারা বুঝতে পারেন জীবন আসলেই কতটা সুন্দর-এমনটাই উঠে এসেছে নানা গবেষণার ফলাফলে। আত্মহত্যা নিয়ে আলোচনা মানে এই নয় যে অন্যকে আত্মহত্যায় উৎসাহিত করা। বরং এই সম্পর্কিত সচেতনতামূলক আলোচনার মাধ্যমেই কঠিন পরিস্থিতিতে মনোবল ধরে রাখার উপায় সম্পর্কে মানুষ জানতে পারে।’

পারিবারিক নির্যাতন, কলহ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, পরীক্ষা ও প্রেমে ব্যর্থতা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, প্রাত্যহিক জীবনের অস্থিরতা, নৈতিক অবক্ষয়, মাদক ইত্যাদি কারণে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এমন কিছু কারণ উল্লেখ করে আলোচকরা আরো বলেন, ‘আত্মহত্যা রোধে আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।’

বিশ্বব্যাপী আত্মঘাতী আচরণ সম্পর্কে সচেতনতা এবং জীবনের মূল স্রোতের ধারার সাথে মানুষকে যুক্ত করার লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড (আইএএসপি) এর উদ্যোগে প্রতি বছর ১০ সেপ্টেম্বর পালিত হয়ে থাকে বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস।