ইসলামে নিষিদ্ধ বেচাকেনা

আফরিন মিম
ডিসেম্বর ২৯, ২০২১

Share Now

বাই শব্দটি আরবি। এর অর্থ মালের বিনিময়ে মাল নেওয়া বা বিনিময় পরিশোধ করে তার বিনিময়ে বস্তু গ্রহণ করা। পারিভাষিক অর্থে বেচাকেনা হলো, এমন আর্থিক লেনদেন, যা নির্দিষ্ট বস্তু বা কোনো উপকারের স্থায়ী মালিকানা সাব্যস্ত করে, যা কোনো নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয় না।

যেসব জিনিস কল্যাণকর ও বরকতময়, সেসব জিনিসে ইসলাম বেচাকেনা বৈধ করেছে। যেসব বেচাকেনার মধ্যে অস্পষ্টতা বা অজ্ঞতা বা ধোঁকা বা মানুষের জন্য ক্ষতিকর বা কারো ওপর আক্রমণের আশঙ্কা থাকে, যা মানুষের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ, ঝগড়া ও মনোমালিন্য সৃষ্টি করে, সেসব বেচাকেনা ইসলাম হারাম করেছে। এসব বেচাকেনার মধ্যে অন্যতম হলো—

১. আল-মুলামাসা : (ছোঁয়া-স্পর্শের বেচাকেনা)

যেমন—কেউ কাউকে বলল, আপনি যে কাপড়টিই স্পর্শ করবেন, তা এত টাকার বিনিময়ে আপনার। এ ধরনের বেচাকেনা ফাসিদ। কেননা এতে অজ্ঞতা ও ধোঁকা আছে।

২. বাইয়ুল মুনাবাজা : (নিক্ষেপ-ছোড়ার বেচাকেনা)

যেমন—এভাবে বলা, যে কাপড়টি আপনি আমার দিকে ছুড়ে মারবেন, তা এত টাকার বিনিময়ে আপনার। এ ধরনের বেচাকেনাও ফাসিদ। কেননা এতে অজ্ঞতা ও ধোঁকা আছে।

৩. বাইয়ুল হুসাত : (ঢিল ছোড়ার বেচাকেনা)

যেমন—এভাবে বলা, আপনি এই কঙ্করটি নিক্ষেপ করুন, তা যে জিনিসটির ওপর পড়বে—তা এত টাকার বিনিময়ে আপনার। এ ধরনের বেচাকেনাও ফাসিদ। কেননা এতে অজ্ঞতা ও ধোঁকা আছে।

৪. বাইয়ুন নাজশ : (দালালির বেচাকেনা)

কেউ মূল্যবৃদ্ধির জন্য অন্যকে শোনানোতে কোনো জিনিসের দাম বলা, অথচ সে জিনিসটি কিনবে না। এ ধরনের বেচাকেনা হারাম। কেননা এতে ক্রেতাকে ধোঁকা দেওয়া হয় এবং তাকে প্রতারিত করা হয়।

৫. বাইআতাইন ফি বাইআহ (এক বেচাকেনায় দুটি বেচাকেনা থাকা)

যেমন—কেউ বলল, আমি আপনার কাছে এই জিনিসটি বিক্রি করলাম এই শর্তে যে আপনি আমার কাছে ওই জিনিস বিক্রি করবেন বা আপনি আমার কাছ থেকে এই জিনিসটি ক্রয় করবেন। অথবা এভাবে বলা, এই জিনিস আপনার কাছে নগদ ১০ টাকায় বা বাকিতে ২০ টাকায় বিক্রি করলাম এবং দুটির একটি নির্দিষ্ট না করেই দুজনে আলাদা হয়ে যাওয়া। এ ধরনের বেচাকেনা সহিহ নয়। কেননা এ ধরনের বেচাকেনায় প্রথম অবস্থায় বিক্রিটি শর্তের সঙ্গে ঝুলে থাকে আর দ্বিতীয় অবস্থায় বেচাকেনার মূল্য স্থির হয়নি।

৬. শহরের লোক গ্রামের কারো বিক্রেতা হওয়া :

অর্থাৎ গ্রামের কেউ শহরে পণ্য নিয়ে আসার আগেই তার থেকে কম মূল্যে ক্রয় করে বেশি মূল্যে বিক্রি করা। দৈনিক বাজারদরের চেয়ে বেশি মূল্যে দালালদের বেচাকেনা।

৭. একজনের বেচাকেনার ওপর আরেকজনের বেচাকেনা :

যেমন—কেউ একটি জিনিস ১০ টাকায় ক্রয় করতে চাইলে তাকে বলা যে এটি আমার থেকে ৯ টাকায় ক্রয় করতে পারবে।

৮. কোনো বস্তু হস্তগত করার আগেই তা আবার বিক্রি করা।

৯. বাইয়ুল ঈনাহ :

যেমন—কোনো বস্তু নির্দিষ্ট মেয়াদে বিক্রি করে অতঃপর তার থেকে নগদে অল্প দামে ক্রয় করা।

১০. জুমার সালাতের দ্বিতীয় আজান হলে যাদের ওপর জুমার সালাত আদায় করা ফরজ, তাদের বেচাকেনা নিষিদ্ধ।

আসান ফিকাহ অবলম্বনে

-কালেরকন্ঠ