এক দশকে ব্যয় কমে অর্ধেক, বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হচ্ছে সৌর বিদ্যুৎ

জহুরুল হক
আগস্ট ১৪, ২০২২

Share Now

একদিকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নির্মল জ্বালানির চাহিদা, অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে সাম্প্রতিক দাবদাহে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা—এ দুই চাওয়া সামনে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ঝুঁকছে বিশ্ব। এতে খরচ কমে আসায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সৌর প্যানেল। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) জানায়, প্যারিস জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এ দশকে সৌর প্যানেলের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখা হবে।

এ ক্ষেত্রে ভালো খবর হচ্ছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে খরচ ব্যাপক হারে কমেছে। জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সৌর প্যানেলে খরচ কমেছে ৮৫ শতাংশ। এমনকি বায়ুতেও খরচ কমেছে ৫৫ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও রাশিয়ার ইউক্রেন হামলা ঘিরে জ্বালানি নিয়ে অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন বাড়বে। এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-ম্যাডিসনের অধ্যাপক গ্রেগরি নেমেট বলেন, ‘বিপুল পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মানুষের কাছে এর চেয়ে সস্তা আর কোনো পথ নেই। ’

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ুবিষয়ক যে বিল উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে ২০৩০ সাল নাগাদ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ৪০ শতাংশ কমানোর জন্য ৩৭০ বিলিয়ন ডলার আলাদা করে রাখা হয়েছে। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির বিশ্লেষকদের এক হিসাবে বলা হয়েছে, এ বিলের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৫ সালের মধ্যে ২০২০ সালের চেয়ে পাঁচ গুণ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে।

নেমেট বলেন, ‘এ শতকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই বিশ্বের বিদ্যুৎ উৎপাদনের অর্ধেক পূরণ করতে পারে সৌরশক্তি। আমি মনে করছি এ খাতে বড় সম্ভাবনা রয়েছে। ’

বর্তমানে সিলিকন সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহার করে প্রায় সব ধরনের প্যানেল তৈরি হচ্ছে চীনে। আইইএ জানায়, সূর্যের আলোকে জ্বালানিতে রূপান্তরের ক্ষেত্রে চার থেকে পাঁচ বছর আগের চেয়ে বর্তমানে সৌর সেল এক-পঞ্চমাংশ বেশি কার্যকর। এমনকি বর্তমানে নতুন নতুন পদার্থ যোগ হচ্ছে ও হাইব্রিড সেল তৈরি হচ্ছে, যার কার্যকারিতা আরো অনেক বেশি হবে। এসব প্রযুক্তি হালকা, সস্তা এবং অত্যন্ত কার্যকর।

এর আগে আইইএর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ সক্ষমতা বাড়বে, তার প্রায় ৯৫ শতাংশই হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। এর অর্ধেকের বেশি থাকবে সৌরশক্তি। আইইএর নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরল বলেন, ‘২০২১ সালে বিদ্যুৎ সক্ষমতায় যোগ হয়েছে রেকর্ড ২৯০ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি, যা প্রমাণ করছে বিশ্বে নতুন জ্বালানি অর্থনীতি গড়ে উঠছে। ’

তিনি জানান, ২০২৬ সাল নাগাদ যে পরিমাণ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন বাড়বে, তা বর্তমানে জ্বীবাশ্ম জ্বলানি ও পরমাণু জ্বালানি থেকে উৎপাদিত সম্মিলিত বিদ্যুতের সমান হবে।

আইইএর প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সরকারগুলো আরো বেশি করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অর্থায়ন করছে ও নীতি গ্রহণ করছে। এর পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও এতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন।

মূলত যে শক্তির উৎস নিঃশেষ হয়ে যায় না, অল্প সময়ের মধ্যেই পুনরায় ব্যবহার করা যায়, তা-ই হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। এ জ্বালানির উৎস হচ্ছে সৌরশক্তি, ভূ-তাপ, বায়ুপ্রবাহ, জলপ্রবাহ, সমুদ্রঢেউ, সমুদ্রতাপ, জোয়ার-ভাটা, বায়োগ্যাস, বায়োফুয়েল, আবর্জনা ইত্যাদি।