গরমে আরামের পোশাক

আফরিন মিম
মার্চ ৮, ২০২২

Share Now

গরমে হালকা রঙের পোশাকের প্রাধান্য বেশি। এবারও থাকছে হালকা রঙের পোশাকের প্রাধান্য।

এই সময়ে সুতি

সুতি কাপড় শুরু থেকেই স্বস্তি দিয়ে আসছে মানুষকে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে সুতির বুননেও যোগ হয়েছে আধুনিকতা। এখন আরো রেশমি ও মিহি করে সুতি কাপড় বোনা হচ্ছে। রঙ বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাস বলেন, ‘সুতি কাপড়ের সুতা মূলত প্রাকৃতিক তন্তু দিয়ে তৈরি। রেশম গুটি, কার্পাস তুলার মতো প্রাকৃতিক নানা উত্স থেকে আসে এর উপাদান। আগে শুধুমাত্র তাঁতের সাহায্যে সুতি বোনা হতো। এখন স্পিনিং ও নিটিংয়ের মাধ্যমে সুতির সুতা মজবুত ও মসৃণ করা হচ্ছে। এই সুতা দিয়েই তৈরি হচ্ছে সুতি কাপড়ের পোশাক। ’

লিনেন, ফ্লানেল, এন্ডির মিশ্রণ

সুতি কাপড়ের সঙ্গে এখন অন্যান্য উপাদানের মিশ্রণ ঘটানো হচ্ছে। এতে সুতির পোশাকে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন বৈচিত্র্য। সুতির সঙ্গে প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক উপাদানের মিশ্রণে লিনেন, ফ্লানেল, এন্ডির মতো আরামদায়ক কাপড়ও বোনা হচ্ছে। এতে সুতির পোশাক পাচ্ছে নতুন নতুন রূপ। অঞ্জন’সের স্বত্বাধিকারী শাহিন আহমেদ বললেন, ‘সুতির সঙ্গে এখন অন্যান্য উপাদানের মিশ্রণ ঘটানোর ফলে নতুন ধরনের কাপড় পাচ্ছি আমরা। এসব কাপড়ে তৈরি পোশাকগুলো আরো বেশি মসৃণ ও মজবুত হচ্ছে। পোশাকে নতুনত্ব আসছে। ব্যবহারেও আরাম ও বৈচিত্র্য যোগ হচ্ছে। ’

কেন পরবেন

সুতির পোশাক আরামদায়ক। সব ঋতুতেই সুতি কাপড়ের জুড়ি নেই। সুতি পোশাকের আরেকটি গুণ, এটি নারী-পুরুষ-ছোট-বড় নির্বিশেষে সবার মধ্যেই একটি মার্জিত ভাব প্রকাশ করে। সুতি কাপড়ের আরেকটি সুবিধা হচ্ছে সহজলভ্য। সাশ্রয়ী মূল্যে সুতি কাপড়ের পোশাক কেনা যায়। সুতির অন্য সব পোশাকের মতো সুতির শাড়িও দামে কম, আবার দেখতেও সুন্দর। ঊর্ধ্বমূল্যের এই সময়ে যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে মানুষ, তখন অর্থ বাঁচাতে সুতি কাপড়ের পোশাক কিনতে পারেন। গরমে সুতি কাপড়ের পোশাক পরলে শরীরে ঘাম কম হবে। অন্য সব কাপড়ে গরমে ঘাম বেশি হয়, শুকাতেও সময় লাগে। সুতি কাপড়ের বেলায় এই অসুবিধা পোহাতে হবে না। কারণ সুতি কাপড়ের পোশাক পাতলা হয়। এর মধ্যে সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারে। ফলে ঘাম হলেও খুব দ্রুত তা শুকিয়ে যায়। শরীর সতেজ রাখে। ঘামাচি, র্যাশ, শরীরের জ্বালাপোড়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

কে ক্র্যাফটের স্বত্বাধিকারী খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘গ্রীষ্মের দাবদাহ ও গরমে সুতি কাপড়ের পোশাক শরীর ও মনে শান্তি ও স্বস্তি এনে দেয়। মন ভালো থাকে। সুতি কাপড় পরে এই সময় কাজ করেও শান্তি পাওয়া যায়। নরম ত্বকে সুতি কাপড়ের পোশাক আরামদায়ক ভাব এনে দেয়। ’ তা ছাড়া সুতি কাপড় ধুতে বেশি কষ্টও হয় না। এখন শাড়ি, পাঞ্জাবি, শার্ট, স্কার্ট, টপস, কাফতান, কুর্তি, প্যান্ট, ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজ, টি-শার্টসহ সব ধরনের পোশাকই সুতি কাপড়ে তৈরি হচ্ছে। ফলে ফরমাল ও ক্যাজুয়াল দুইভাবেই সুতি কাপড়ের পোশাক বেছে নেওয়া সম্ভব। সুতি কাপড়ের পোশাক সব জায়গায়ই মানিয়ে যায়।

ঘর্মাক্ত পোশাক ভাঁজ করার আগে

ঘর্মাক্ত পোশাক ভাঁজ করা যাবে না। ঘর্মাক্ত পোশাক ভাঁজ করে আলমারিতে রাখা যাবে না বা ঘাম শুকিয়েও তুলে রাখা যাবে না। এতে পোশাকে দুর্গন্ধ তৈরি হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস ও ছত্রাক জন্মাতে পারে। এ জন্য সুতি কাপড়ের পোশাক ঘেমে গেলে আগে ঘাম শুকাতে হবে। ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। রোদে শুকিয়ে তারপর উল্টো করে ইস্ত্রি করতে হবে।

সুতি কাপড়ের যত্ন

সৌমিক দাস জানান, ‘যে কাপড়ে যত বেশি ভ্যালু অ্যাড করা হয় সে কাপড়ের একটু আলাদা ও বেশি যত্ন নিতে হয়। সুতি কাপড় ড্রাই ওয়াশ বা মেশিনে ওয়াশ না করাই ভালো। ’ 

১ . সুতির পোশাক ধোয়ার সময় বেশি ঘষাঘষি করা যাবে না।

২ . বেশি ময়লা দূর করতে গরম পানি দিয়ে ধোয়া যাবে না।

৩. সুতি কাপড় ঘামে ভিজে গেলে বাসায় ফিরে ধুয়ে ফেলতে হবে।

৪. সাধারণ সাবান বা ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়েই সুতির পোশাক পরিষ্কার করা যাবে।

৫. কাপড় মসৃণ ও সুন্দর রাখতে মাড় দেওয়া যেতে পারে।

৬. কাপড়ে দাগ লাগলে জায়গাটি পানিতে ঘণ্টা দুয়েক ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর সাবান দিয়ে ধুলে দাগ উঠে যাবে।

৭. চড়া রোদে নয়, হালকা রোদ বা ছায়ায় উল্টো করে মেলে কাপড় শুকাতে হবে।

৮. সুতির পোশাক উল্টো দিক ইস্ত্রি করে নিতে হবে।

৯. সুতির পোশাক প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে এমন নয়। ময়লা লাগলে, ঘামে ভিজে গেলে পোশাকটি সেদিনই ধুয়ে ফেলতে হবে।