জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে হেরে গেলেন মীম

তৌহিদুল ইসলাম
এপ্রিল ৯, ২০২২

Share Now

পাঁচ দিন ধরে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে মারা গেছেন অগ্নিদগ্ধ মরিয়ম আক্তার মীম। শুক্রবার (০৮ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাবা মনির হোসেন ঢালী।

মিমের খালা ইতি আক্তার শনিবার সকাল ১০টার দিকে জানায়, মিমের মরদেহ এখনো তারা বুঝে পায়নি। তারা মরদেহের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপেক্ষা করছেন।

জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার হাজি নোয়াদ্দা ঢালীকান্দি গ্রামের মনির হোসেন ঢালীর মেয়ে মরিয়ম আক্তার মীমের সঙ্গে একই উপজেলার বাহেরকান্দি মুন্সিকান্দি গ্রামের নওয়াব আলী সরকারের ছেলে মামুন সরকারের ছয় বছর আগে বিয়ে হয়। বৈবাহিক জীবনে তাদের মুছা (৫) নামে এক ছেলেসন্তান রয়েছে।

মরিয়মের পরিবারের দাবি, যৌথ পরিবারে মামুনের মা-বোন প্রায় নির্যাতন করত মীমকে। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে মাঝে-মধ্যেই বাবার বাড়ি চলে আসত মীম। কিন্তু মিমের দরিদ্র বাবার সামর্থ্য ছিল না মীমকে নিজ সংসারে রেখে ভরণ-পোষণ দেওয়ার। তাই বার বার বুঝিয়ে আবার তাকে স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দিত।

মীমদের প্রতিবেশী রহিমা বলেন, সোমবার (০৪ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে বেহেরকান্দি গ্রামের ইউপি সদস্য মুঠোফোনে মীমের বাবাকে জানায়, মীম নিজেই তার গায়ে আগুন দিয়েছে। পরে খবর পেয়ে আমি মীমের বাবার সঙ্গে তার শ্বশুরবাড়িতে যাই। গিয়ে দেখি মীমের সমস্ত শরীর আগুনে পুড়ে আছে। মীমের শাশুড়িসহ ওই বাড়ির লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে, আমরা শুধু একটা চিৎকার শুনেছি।

পরে দরজা ভেঙে দেখি, মীমের শরীরে আগুন জ্বলছে। মীম চেয়ে রয়েছে। পরে‌ আমরা মিমের শরীরে পানি ঢেলেছি। রহিমা অভিযোগ করে বলেন, মীমের শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলছে, ওরা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখছে মীমের শরীরে আগুন জ্বলছে। কিন্তু আমরা ওই বাড়িতে দরজা ভাঙা দেখিনি। আমাদের ধারণা শাশুড়ি-ননদরা মিলে ওর শরীর আগুন দিয়েছে। 

রহিমা অভিযোগ করে আরও বলেন, কিছু দিন আগে তেল কিনে দিতে হয় দেখে ওর ননদরা মীমের চুল কেটে দিয়েছে। মিম ওই বাড়িতে ঘর সংসার করতে চায়নি। কিন্তু ওর বাবা একটা ছেলে আছে দেখে বার বার বুঝিয়ে স্বামীর বাড়িতে পাঠাত। 

মীমের ছোট ভাই সোয়েব বলেন, আপুর শরীরে আগুন লাগছে শুনে আমরা ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি‌, দুলাভাই আপুর কাছে না গিয়ে বাইরে ঘুরতেছে। ওই বাড়ির লোকজন আমার আপুর শরীরের আগুন নেভানোর চেষ্টা করতেছিল কিন্তু দুলাভাই কাছে আসেনি। পরে আমরা আপুকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুলাভাই বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।

মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ওই ঘটনায় আমি কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।