ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে যান চলাচল হ্রাস

তাহানুল মারুফ
আগস্ট ৭, ২০২২

Share Now

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বন্ধ ছিল অধিকাংশ দূরপাল্লার যানবাহন। বিশেষ করে মিরসরাই থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম বারইয়ারহাট থেকে চট্টগ্রামের মাদারবাড়ী রুটে চলাচলকারী চয়েস ও উত্তরা পরিবহন। যার ফলে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের।

মিরসরাইয়ের সব স্ট্যান্ডে কর্মস্থলমুখী মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে সকাল থেকে। অন্যদিনের তুলনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে দূরপাল্লার বাস আগের চেয়ে অনেক কম চলাচল করতে দেখা গেছে।

যাত্রীবাহী বাস ছাড়াও ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি, পিকআপসহ সব ধরনের যান চলাচল অনেক কম ছিল। যানবাহন চলাচল কম থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী অন্যান্য যাত্রীবাহী কিছু পরিবহন; বিশেষ করে সিডিএম পরিবহন, দাউদকান্দি এক্সপ্রেস, প্রান্তিক পরিবহনসহ অন্যান্য পরিবহন।

এছাড়াও হানিফ, ইউনিক, শ্যামলী, সৌদিয়া, তিশা পরিবহন ১০০ টাকার স্থলে ১৫০-২০০ টাকা ভাড়া আদায় করছে। আবার গাড়ি কম থাকায় বারইয়ারহাট চয়েস কাউন্টার থেকে অনেকেই সিএনজি অটোরিকশাযোগে চট্টগ্রাম সিটি গেইট পর্যন্ত বিকল্প বাহন বাসের পরিবর্তে মাইক্রোবাসে করে ২৫০-৩০০ টাকা করে চট্টগ্রাম গমন করতে দেখা যায় যাত্রীদের।

জানা যায়, দেশের লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল কম ছিল সকাল থেকে। ভোর থেকে দূরপাল্লা ও আঞ্চলিক রুটে গণপরিবহন কম চলার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হয় কর্মস্থলমুখী মানুষদের।

মহাসড়কের মিরসরাই অংশের ৩০ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্ট্যান্ডে গাড়ির জন্য মানুষকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

মাঝে মধ্যে দু’একটি লোকাল ও দূরপাল্লার বাস চলাচল করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে কম। মহাসড়কের বারইয়ারহাট, মস্তাননগর বিশ্বরোড, ঠাকুরদীঘি, মিঠাছড়া, মিরসরাই সদর, বড়তাকিয়া, হাদিফকিরহাট, নিজামপুর কলেজ, বড়দারোগাহাটসহ সব স্ট্যান্ডে কর্মস্থলমুখী মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া বারইয়ারহাট-বড়দারোগাহাট, সীতাকুণ্ড রুটে চলাচল করা লেগুনা, সেইফলাইন পরিবহনের গাড়ি চলাচলও অনেক কম ছিল।

বারইয়ারহাট থেকে চট্টগ্রামগামী যাত্রী আব্দুস শুক্কুর জানান, দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে বাড়তি ভাড়া দিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চট্টগ্রাম আসছি।

বারইয়ারহাট ফুটওভার ব্রিজের নিচে গাড়ির জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রী নজরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে চলতে পারেনা। আমরা যেন অসহায় হয়ে পড়েছি, একদিকে তেলের দাম বৃদ্ধি, অপরদিকে যানবাহন স্বল্পতা ও বাড়তি ভাড়া আদায়। এটার সঠিক ও স্থায়ী সমাধান জরুরি।

শনিবার বারইয়ারহাট থেকে সীতাকুণ্ড রুটে চলাচলকারী লেগুনা হিউম্যান হলারগুলো চলাচল অনেক কম ছিল। বারইয়ারহাট থেকে বড়দারোরগাহাট, সীতাকুণ্ড রুটে চলাচলকারী লেগুনা পরিবহনের চালক নিজাম উদ্দিন বলেন, আমাদের লেগুনা হিউম্যান হলারগুলো ডিজেলচালিত। হঠাৎ করে তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা বেসামাল হয়ে গেছি। জ্বালানি তেল খরচ ও অন্যান্য খরচ বহন করে গাড়ি চালানো খুবই দুষ্কর হয়ে গেছে। তাই গাড়ি চলাচলও অনেক কমে গেছে। যেগুলো চলেছে সেগুলোতে বাড়তি ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে।

বারইয়ারহাট ইউনিক ও এস.আলম পরিবহন কাউন্টার মাষ্টার হারুনুর রশিদ বলেন, শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে এস. আলম পরিবহনের কোন বাস ছেড়ে যায়নি। গাড়ি কম থাকায় অন্যান্য পরিবহনগুলোও চট্টগ্রাম থেকে যাত্রী ভর্তি করে গেইট লক করে চলে যায়, তবে কাউন্টারে যাত্রী ছিল কিন্তু বাড়তি ভাড়ার কারণে অনেকেই ফিরে যায়।

মিরসরাই থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে যাওয়ার অন্যতম বাস সার্ভিস চয়েস পরিবহণ ও উত্তরা বাস সার্ভিস। শনিবার বিকেলে চয়েস ও উত্তরা পরিবহনের কিছু গাড়ি বারইয়ারহাট থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে ভাড়া কিছু বাড়তি আদায় করা হয়। চয়েস পরিবহণ মালিকদের একজন মোশারফ হোসেন।

তিনি বলেন, আমরা কিভাবে গাড়ি চালাবো? বারইয়ারহাট থেকে চট্টগ্রামের মাদারবাড়ী মূল স্টপেজে আসা যাওয়ায় ৪৫-৫০ লিটার ডিজেল লাগে। পূর্বের ৮০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা তার মানে ৩৪ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন প্রায় ২০০০ টাকা বাড়তি দিতে হবে। এছাড়াও গাড়ির পার্টসের দাম বৃদ্ধি, ডকুমেন্ট আপডেট করতে আয়কর বৃদ্ধি ও অন্যান্য খরচতো আছেই।

চট্টগ্রাম শহরে যাওয়ার জন্য মিরসরাই সদরের বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করা চাকুরিজীবী নুরুচ্ছালাম বলেন, সকাল ৮টা থেকে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। এখন ৯টা ২০ মিনিটে বাসে উঠতে পারিনি। দু’একটি বাস এলেও খুব ভিড়, এখানে দাঁড়াচ্ছে না। গতরাতে হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় গণপরিবহন চলাচল কমে গেছে।

লেগুনা চালক জানে আলম বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় নেওয়া ডিজেল থাকায় বড়দারোগাহাট থেকে বারইয়ারহাট যাচ্ছি। এরপর গাড়ি বন্ধ করে দেব। ৮০ টাকার ডিজেল এক লাফে ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা হয়েছে। ভাড়াতো আর বাড়েনি। যাত্রীদের সঙ্গে ঝগড়া করতে পারবো না। তার চেয়ে ভালো গাড়ি চালাবো না। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রি কমেছে ফিলিং স্টেশনগুলোতেও।

বারইয়ারহাটের রুপনগর ফিলিং ষ্টেশনের ম্যানেজার মুজিবুল হক জানান, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিকাংশ যানবাহন বন্ধ ছিল, যার ফলে আগের দিনের চেয়ে শনিবার তেল বিক্রি তুলনামূলকভাবে অনেক কম ছিল।

সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক অলি আহমদ বলেন, আমরা সাংগঠনিকভাবে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখতে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় মালিকরা গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে। তাদেরও কী করার আছে? লিটারে এক-দুই টাকা বাড়লে একটা কথা ছিল। এভাবে ৩৪-৪৬ টাকা লিটার প্রতি বেড়েছে। মালিকরাতো লোকসান দিয়ে গাড়ি চালাবে না।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রতি লিটার ডিজেলে দাম বেড়েছে ৩৪, কেরোসিনে ৩৪, অকটেনে ৪৬, পেট্রলে ৪৪ টাকা। দাম বাড়ার পর প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা ও পেট্রল ১৩০ টাকায় কিনতে হবে। এর আগে খুচরা মূল্য ছিল প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা, কেরোসিন ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা ও পেট্রল ৮৬ টাকা।