নিপাহ ভাইরাস !

আফরিন মিম
ডিসেম্বর ১১, ২০২১

Share Now

১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়ায় সর্বপ্রথম এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যায়। রিপোর্ট অনুযায়ী তখন এই ভাইরাসের কারণে মালয়েশিয়ায় ২৫৭ জন মস্তিষ্কের প্রদাহ বা নিপাহ এনসেফালাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছিল, যার মধ্যে ১০০ জনের মৃত্যু হয়। ২০০১ সালে বাংলাদেশে প্রথম মেহেরপুরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর নিপাহের প্রাদুর্ভাব প্রতিবছর শীতকালে প্রধানত বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল এবং ভারতের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে দেখা দেয়। বাংলাদেশের মেহেরপুর, নওগাঁ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, কুষ্টিয়া, পাবনা, নাটোর, মানিকগঞ্জ, গাইবান্ধা, রংপুর, নীলফামারী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, কুমিল্লা, জয়পুরহাট ও রাজশাহীতে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। 

যেভাবে ছড়ায়
সাধারণত উড়ন্ত বাদুড় ও শূকর এই ভাইরাস বহন করে। নিপাহ ভাইরাসবাহী বাদুড় যখন কোনো ফল খায় বা খেজুরের রস পান করে তখন বাদুড়ের লালা সরাসরি সেই ফল বা খেজুরের রসকে দূষিত করে। এরপর কোনো মানুষ যদি এই দূষিত ফল খায় বা কাঁচা খেজুরের রস পান করে তাহলে সে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া ২০০১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, এই ভাইরাস একজন মানুষ থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হয়।

লক্ষণ
এই ভাইরাস সাধারণত মানুষের মস্তিষ্কে তীব্র প্রদাহ বা এনসেফালাইটিস ও থ্রম্বোসিস বা রক্ত জমাট বাঁধায়, ফুসফুসে এটিপিক্যাল নিউমোনিয়া করে, কিডনি, রক্তনালিসহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত করে মৃত্যু ঘটাতে পারে। সাধারণত মানুষের শরীরে ভাইরাস ঢোকার চার থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে এই ভাইরাসের লক্ষণ প্রকাশিত হয়। এর প্রাথমিক উপসর্গগুলো ইনফ্লুয়েঞ্জা বা অন্যান্য ভাইরাসের মতোই। যেমন—জ্বর, বমি, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা থেকে মস্তিষ্কের প্রদাহ, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। ভাইরাসের আক্রান্ত নিশ্চিত হতে বা আক্রান্ত ব্যক্তির ডায়াগনোসিস করতে সাধারণত অ্যান্টিবডি টেস্ট বা পিসিআর টেস্ট করা হয়। আবার কিছু কিছু আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ সেরে যাওয়ার পরও অনেকের চিরস্থায়ী মস্তিষ্কের সমস্যা হতে পারে। আবার এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ সেরে যাওয়ার কয়েক বছর পর আবার এই ভাইরাস সক্রিয় হয়ে রিল্যাপসিং এনসেফালাইটিস করতে পারে। তাই নিঃসন্দেহে এটি একটি বিপজ্জনক ভাইরাস।

সাবধানতা
এই ভাইরাসের চিকিৎসার এখন পর্যন্ত কোনো স্পেসিফিক ওষুধ নেই এবং ভাইরাস প্রতিরোধী কোনো ভ্যাকসিনও নেই। তবে যেহেতু এটি একটি এনভেলপড ভাইরাস, তাই সাবান ও তাপের মাধ্যমে এই ভাইরাস সহজেই নষ্ট করা সম্ভব।

তাই এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে হলে কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যেমন—খেজুরের রস ফুটিয়ে পান করা, ফল সাবান দিয়ে ধুয়ে খাওয়া বা বাদুড়ে খাওয়া ফল পরিহার করা, আক্রান্ত ব্যক্তি বা পশু থেকে নিজের দূরত্ব বজায় রেখে চলা এবং শূকর, গরু বা পশুর খামারে কাজ করার সময় সতর্ক থাকা ইত্যাদি।

-ডা. বুশরা তানজীম নীপা, সহযোগী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ