বরিশালে আসতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা

তাহানুল মারুফ
নভেম্বর ৩, ২০২২

Share Now

সমাবেশের তিন দিন আগ থেকেই বরিশালে আসতে শুরু করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। গণপরিবহণ বন্ধের দুর্ভোগ এড়াতে এই কৌশল নিয়েছেন তারা।

বুধবার নগরে বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকার নেতাকর্মীদের দেখা গেছে। সাগরপারের মনপুরা থেকে দক্ষিণ উপকূলের পাথরঘাটা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার অনেকেই বরিশালে এসে পৌঁছেছেন।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে সমাবেশে আসতে যাতে সমস্যা না হয়, সেজন্যে কর্মী-সমর্থকদের ২/৩ দিন আগেই আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ কারণেই তারা বরিশালে আসতে শুরু করেছেন। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সিংহভাগ নেতাকর্মীও ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছেন।

নগরীর দুটি বাস টার্মিনাল ও লঞ্চঘাট ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি লঞ্চ-বাসে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ-তিনগুণ বোঝাই হয়ে আসছে মানুষ। তাদের একটি বড় অংশ সমাবেশের উদ্দেশ্যে আসছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দুপুরে নগরীর সদর রোডে বিএনপি কার্যালয়ে গিয়ে শত শত নেতাকর্মীর উপস্থিতি চোখে পড়ে। বরিশালের ৬ জেলা আর ৪২ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছে মানুষ। অফিসের সামনে দেখা হয় খলিল সরদারের সঙ্গে। বাড়ি ভোলা জেলার চরফ্যাশনের শশীভূষণ এলাকায়।

তনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার লঞ্চ ও বাসে ভিড় আরও বাড়বে। শুক্রবার থেকে তো সবই বন্ধ। তাই আগেভাগেই চলে এসেছি। আমাদের এলাকার অনেকেই এসেছে। সবাই আছে বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়স্বজনের বাসায়।’

বরগুনা জেলার পাথরঘাটা থেকে আসা আলম মাঝি বলেন, ‘আজ (বুধবার অনেকেই এসে পৌঁছেছে। বাকিরা কাল আসবে। সমাবেশে যোগ দিতে পাথরঘাটা থেকেই বরিশালে আসার কথা রয়েছে দুই হাজার নেতাকর্মীর।’ খলিল-রফিকের মতো অনেকের সঙ্গে কথা হয়, যারা প্রত্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন।

বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, অন্যান্য বিভাগে অনুষ্ঠিত সমাবেশের তুলনায় এখানে অনেক বেশি বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। খুলনা-রংপুরে সমাবেশের সময় কেবল বাস আর লঞ্চ বন্ধ থাকলেও থ্রি-হুইলার কিংবা রিকশা করে আসতে পেরেছে মানুষ। বরিশালে থ্রি-হুইলার চলাচলও বন্ধ থাকবে দুদিন। স্থানীয় লঞ্চ মালিক সমিতির অফিসে গেছে অভ্যন্তরীণ রুটের সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ। বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চও।

চরম বৈরী এই পরিবেশে গণসমাবেশ কতটুকু সফল হবে জানতে চাইলে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এইচএম তসলিমউদ্দিন বলেন, ‘এসব বাধা সত্ত্বেও মানুষ আসবে। শুধু যুবদলেরই ৩০ হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেবেন। সবরকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি আমরা।’

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, ‘অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা। ৫ নভেম্বর বিএনপি দেখিয়ে দেবে জনসমুদ্র কাকে বলে।’

বরিশাল জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান নান্টু বলেন, ‘এসব বাধা যে আসবে, তা আমরা আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছি। তাই জনসমাবেশে লোকসমাগম প্রশ্নে নেওয়া হয়েছে ভিন্ন কৌশল। অপরাজনীতিকে সঠিক রাজনীতি দিয়ে মোকাবিলা করব আমরা।’

এদিকে সোমবার থেকে হঠাৎ নগরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ। বুধবার সন্ধ্যায় নগরে মোটরসাইকেলের বিশাল বহর নিয়ে শোডাউন করে ছাত্রলীগ। এর আগে দুপুরে সন্ত্রাস নৈরাজ্যের প্রতিবাদে নগর প্রদক্ষিণ করে শ্রমিক লীগের মিছিল। রাতে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে মিছিল করে যুবলীগের কর্মীরা। এসব কর্মসূচি সম্পর্কে নগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইস আহম্মেদ মান্না বলেন, ‘সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বিএনপি।

বিশৃঙ্খলা যেন না হয়, সেজন্য মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে শান্তি র‌্যালি করেছি আমরা।’ যুবলীগ মহানগর কমিটির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বিসিসির ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্না বলেন, ‘যুবলীগের রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ১১ ডিসেম্বর ঢাকায় হবে যুব মহাসমাবেশ। সেই কর্মসূচি সফলে মিছিল-সমাবেশ করছি আমরা।’

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এভাবে ব্যাখ্যা দিলেও এসব ঘটনাকে গণসমাবেশ বানচালের অপচেষ্টা বলছে বিএনপি। বুধবার দুপুরে বরিশাল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘বিভাগীয় গণসমাবেশ যাতে ব্যর্থ হয় তার সবরকম চেষ্টাই করছে ক্ষমতাসীন দল। সেই চেষ্টার পুরোটাই করা হচ্ছে অগণতান্ত্রিক পন্থায়। বরিশাল নগর, উজিরপুর, বাকেরগঞ্জ, বানারীপাড়া, পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগকালে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। দফায় দফায় শোডাউন আর ভয়ভীতি দেখিয়ে নেতাকর্মীদের সমাবেশে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

এক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এসবে লাভ হবে না। ৫ নভেম্বরের গণসমাবেশে জনসমুদ্র দেখবে সবাই। বরিশালের গণসমাবেশ হবে সর্বকালের সর্ববৃহৎ জনসভা।’ সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেনসহ স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।’

বিএনপির এই অভিযোগের জবাবে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘তারা (বিএনপি) তাদের কর্মসূচি করছে, আমরা আমাদেরটা। এখানে বিএনপির সমাবেশ বানচালের চেষ্টার প্রশ্ন আসছে কেন?

তারা বলুক যে আমরা তাদের কোনো কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছি? এখন তাদের কর্মসূচি আছে বলে কি আমরা আমাদের সব কর্মসূচি বন্ধ রাখব? বিএনপি আসলে ভয় পেয়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে যে বরিশালের সমাবেশ সফল হবে না। তাই তারা এসব আবোলতাবোল বকছে। আমরা রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবিলা করব, কোনো অপরাজনীতি দিয়ে নয়।’

লিফলেট বিতরণ : গণসমাবেশ উপলক্ষ্যে বরিশালে বুধবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও প্রস্তুতি সভা করেছেন বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা। গণসমাবেশের নির্ধারিত স্থান বঙ্গবন্ধু উদ্যানে সন্ধ্যায় নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করেছে মহানগর বিএনপি। দুপুরে নগরীর নাজিরপুল থেকে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) বিলকিস জাহান শিরিন প্রমুখ।

ভোলা ও চরফ্যাশন প্রতিনিধ জানান, বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিতে ইতোমধ্যে ভোলায় কয়েক দফা প্রস্তুতি সভা হয়েছে। সভা শেষে বিএনপি নেতারা জানান, আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশে লঞ্চ, স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হলে তারা জেলে নৌকায় চড়ে সমাবেশে যাবেন। অনেকেই ইতোমধ্যে বরিশাল চলে গেছেন।

এদিকে জেলার চরফ্যাশনে বিভাগীয় সমাবেশে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে এক যুবদল নেতাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে জখম করেছে সন্ত্রাসীরা। বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। তার নাম মো. ইদ্রিজ আলী। তিনি মাদ্রাজ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি। এছাড়া কলমি ইউনিয়ন ছাত্রদল সম্পাদক সাগরকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। আগের দিন আঞ্জুরহাট এলাকায় সরকারি দলীয় লোকদের হামলায় ২০ বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে পিরোজপুরে বিএনপির নেতাকর্মীদের হুমকি-ধমকি ও বাধা প্রদানের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। এতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন জানান, গণসমাবেশ সামনে রেখে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় লিফলেট বিতরণের সময় আওয়ামী লীগ বাধা দিয়েছে। এছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ের বিএনপি নেতাকর্মীদের বরিশালে না যাওয়ার জন্য হুমকি-ধমকিসহ পুলিশের হয়রানি অব্যাহত রয়েছে।