মেট্রোরেল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

মোঃ আশিকুর রহমান
ডিসেম্বর ২৮, ২০২২

Share Now

রাজধানী ঢাকাবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে দেশে সূচিত হলো আধুনিক নগরায়নের এক নতুন অধ্যায়।

বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় উত্তরার দিয়াবাড়ি মাঠে ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে দেশের প্রথম বিদ্যুৎচালিত দ্রুতগতির এই মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সেখানে সুধী সমাবেশে যোগ দেন তিনি।

সুধী সমাবেশ শেষে মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হয়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও স্টেশনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) থেকে মেট্রোরেল জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

মেট্রোরেলের উদ্বোধন উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের গর্ব ও আকাঙ্ক্ষার প্রতীক মেট্রোরেল বাংলাদেশের নগর গণপরিবহন ব্যবস্থায় একটি অনন্য মাইলফলক। উদ্বোধনের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।

এদিন মেট্রোরেল উদ্বোধন কেন্দ্র করে দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পুরো এলাকা ঢেকে ফেলা হয়েছে নিরাপত্তা চাদরে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে র‌্যাবের স্পেশাল ফোর্স, হেলিকপ্টার, ডগ স্কোয়াড ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট।

জানা গেছে, ঢাকার যানজট নিরসনে মেট্রোরেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে লক্ষ্যে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) গঠন করা হয়। এই কোম্পানির মাধ্যমে প্রথম প্রকল্প হিসাবে নেওয়া হয় ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট লাইন-৬। যা এমআরটি-৬ নামে পরিচিত। প্রকল্পটি উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে কমলাপুর পর্যন্ত। এই প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার।

বুধববার উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন। এই অংশের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। ১০ মিনিট অন্তর চলবে এই ট্রেন। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কোনো স্টেশনে না থেমে পৌঁছাতে সময় লাগবে ১০ মিনিট এবং স্টেশনগুলোতে থেমে থেমে পৌঁছাতে সময় লাগবে ১৭ মিনিট। প্রথম দিকে সকাল ৮টা থেকে দিনে চার ঘণ্টা করে ট্রেন চলবে। আগে সিদ্ধান্ত ছিল, সকাল ও বিকেলে চলবে। পথে পল্লবী স্টেশনে থামবে। এখন সিদ্ধান্ত বদল হয়েছে। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বিনা বিরতিতে চলবে ট্রেন।

মেট্রোরেলের প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ৫ টাকা করে। আর সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ভাড়া ১০০ টাকা। তবে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাড়া মওকুফ থাকবে। মেট্রোরেলে মাসিক, সাপ্তাহিক, পারিবারিক এবং কার্ডে ভাড়া দেয়ার বিশেষ সুবিধা থাকবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা প্রতিবার ভ্রমণে পাবেন বিশেষ ছাড়। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফপাস থাকছে না। প্রথমদিকে কেবল স্টেশনের কাউন্টার থেকে এমআরটি পাস ইস্যু করা হবে। এর বাইরে স্টেশনের কাউন্টার কিংবা টিকিট বিক্রির মেশিন থেকে নির্দিষ্ট যাত্রার টিকিট কেনা যাবে।

জাপান সরকারের অর্থায়নে রাজধানীবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। প্রথমে কথা ছিল উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল স্থাপন করা হবে। সে হিসেবে এ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মেট্রোরেলের দূরত্ব আরও ১.১৬ কিলোমিটার বাড়িয়ে কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণের পরিকল্পনা করে সরকার। ফলে মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এ ছাড়া মেট্রোরেলের রুট কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করায় প্রকল্পটির কাজ শেষ হতে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে।