রাজশাহীতে হত্যা মামলায় ২ জনের ফাঁসি

মোঃ আশিকুর রহমান
ডিসেম্বর ১৩, ২০২১

Share Now

এবার রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কাঠালবাড়িয়া গ্রামে কৃষক নুরুন্নবী হত্যায় নারীসহ ২ জনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও করা হয়েছে। অপরদিকে অপরাধ প্রমান না হওয়ায় এক আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল ও বিশেষ দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক আকবর আলী শেখ এ রায় ঘোষণা করেন। সাজা প্রাপ্তরা হলেন, দুর্গাপুর উপজেলার কাঠালবাড়িয়া গ্রামের মফিজ উদ্দিন ও দেরাজ উদ্দিনের স্ত্রী ফুলজান বিবি।

জন নিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি আসাদুজ্জামান মিঠু জানান, এ মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। তবে আসামি মফিজ উদ্দিন ও ফুলজান বিবির ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার অপর আসামি ফুলজানের স্বামী দেরাজ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকায় তাকে খালাস দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিল। এই মামলায় ২৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে আদালত।

আইনজীবী আসাদুজ্জামান মিঠু বলেন, রাজমিস্ত্রির স্ত্রী ফুলজানের সাথে পরকীয়া ছিল মফিজ উদ্দিনের। একদিন সেই বাড়িতে নূর নবীকে দেখতে পান মফিজ উদ্দিন। এসময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে নুরুন্নবীকে হত্যার হুমকি দেন মফিজ।

এই সূত্র ধরে পরিকল্পনা করে ফুলজান বিবি ও মফিজ উদ্দিন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী নুরুন্নবীকে বাড়িতে ডাকেন ফুলজান। আর আগে থেকেই বাড়িতে অবস্থান করছিলেন মফিজ উদ্দিন। এর পরে নুরুন্নবী ও মফিজের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে ফুলজান বিবি একটি ধারালো হাসুয়া মফিজের হাতে তুলে দিয়ে হত্যা করতে বলে। এতে মফিজ নুরুন্নবীর গলায় আঘাত করে মস্তক আলাদা করে দেয়।

এর পরে তারা মফিজ ও ফুলজান বিবি নিহত নুরুন্নবীর লাশ একটি বস্তায় ভরে বিলে ফেলে আসেন। আর মস্তকটি আরো দূরে ফেলে দিয়ে আসে। মফিজ ও ফুলজান বিবির ধারণা ছিল-মানুষ যেন মনে করে নুরুন্নবীকে গলা কাটারা হত্যা করে মস্তক নিয়ে গেছে। তবে যে রাস্তা দিয়ে হত্যার পরে মৃত নুরুন্নবীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাতে রক্ত পড়ে ছিল। এই রক্ত ফুলজান বিবির বাড়ি থেকে লাশ ফেলে আসা জমি পর্যন্ত দেখা যায়।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল রাজশাহীর দুর্গাপুরের কাঠালবাড়িয়া নিজ এলাকা থেকে নিখোঁজ হন নুরুন্নবী। একদিন পরে সকালে দুর্গাপুরের কান্দরে বিলে নুরুন্নবীর মস্তিষ্ক বিহীন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নুরুন্নবীর ছেলে হাসেম আলী দূর্গাপুর থানায় বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন।

এই ঘটনায় স্থানীয়রা ফুলজান বিবির বাড়ি ঘেরাও করে। পরে পুলিশ ফুলজান বিবি, তার স্বামী রাজমিস্ত্রি, ছেলে আব্দুর রহিম ও মফিজ উদ্দিনকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে মামলাটি সিআইডিতে গেলে ছেলে আব্দুর রহিমের কোন সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেয়। পরবর্তীতে আদালতে ফুলজান বিবি ও মফিজ উদ্দিন হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন এরই প্রেক্ষিতে আজ ১৩ ডিসেম্বর এই আলোচিত রায় হয়।