রাজ-পরীর ঘরে আরো ৪ সাদা শাবক

তাহানুল মারুফ
আগস্ট ১, ২০২২

Share Now

সারাদেশে যখন বাঘের সংখ্যা কমছে, তখন ব্যতিক্রম চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়। বাঘ নিয়ে চারদিকে হাহাকারের মধ্যে রাজ-পরীর সংসারে নতুন ৪ অতিথির আগমন সাড়া ফেলেছে। রাজ-পরী নামের বেঙ্গল টাইগার দম্পত্তি এর আগেও  একটি সাদা বাঘ জন্ম দিয়েছিল।

সাদা বাঘ জন্ম নেওয়া খুব বিরল ঘটনা। চিড়িয়াখানা কিংবা সাফারি পার্কে সহজে এর দেখা মেলে না। সাদা বাঘ জন্মেরও নানা কারণ থাকে।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডাঃ শাহাদাৎ হোসেন শুভ রোববার (৩১ জুলাই) জানান, বাঘ দম্পতি রাজ-পরীর সংসারে ৪টি সাদা শাবকের জন্ম নিয়েছে শনিবার বিকেলে। ২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে একজোড়া বাঘ আনা হয়েছিল। সেই বাঘ দম্পতির ঘরেই প্রথম সাদা বাঘের জন্ম। এখন এই চারটি শাবকসহ মোট বাঘের সংখ্যা ১৬টি। যার মধ্যে ১০টিই রাজ-পরী দম্পতির। চারটি শাবককেই দুধ দিচ্ছে পরী। মায়ের সঙ্গেই রয়েছে শাবকগুলো। এক সপ্তাহ পর তাদের লিঙ্গ পরিচয় শনাক্ত সম্ভব হবে। তবে এখনও পর্যন্ত জন্ম নেয়া চারটি শাবকই সুস্থ আছে।

এর আগে ২০১৮ সালে রাজ–পরী প্রথম একটি সাদাশাবক জন্ম দেয়। ওই শাবকটির নাম শুভ্রা। শুভ্রার এখন একটি বাচ্চা রয়েছে। রাজ-পরীর অপর মেয়ে জয়ার ৩টি বাচ্চা রয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলেন, জিনগত কারণ এবং শ্বেতী বা অ্যালবিনোর কারণে বাঘ সাদা হতে পারে। তবে অ্যালবিনোর কারণে সাদা হলে পুরোটা সাদা হবে। আর জিনগত হলে তা সাদার ওপর কালো ডোরাকাটা থাকবে। সাদা বাঘের সঙ্গে ব্রিডিং করলে সাদা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এটা জিনগত কারণে হয়েছে।

রাজ ও পরী দুজনেরই গায়ের রং বেঙ্গল টাইগারের স্বাভাবিক যে রং অর্থাৎ হলুদের মধ্যে কালো ডোরাকাটা। আর তারা যেসব সাদা শাবকের জন্ম দিয়েছে, তাদের রং সাদার ওপর কালো ডোরাকাটা।

প্রসঙ্গত, চিড়িয়াখানায় জন্ম নেয়া বাঘিনী ‘জয়া’ ২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর দুটি বাঘ শাবকের জন্ম দেয়। তখন তা নিয়ে বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল এক ডজনে। যার মধ্যে দুটি বাঘ আর অন্যগুলো বাঘিনী। এর আগের বছর ১৪ নবেম্বর ‘জয়া’ প্রথম শাবকের জন্ম দিয়েছিল। যেটির নাম রাখা হয়েছে ‘জো-বাইডেন’।

প্রাণী চিকিৎসক ও প্রাণী বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রাণী সচরাচর যে রঙের হয় তার চেয়ে ভিন্ন রঙের হলে তা এলবিনো হিসেবে পরিচিত। তাই বেঙ্গল টাইগারের ক্ষেত্রে সাদার ওপর কালো ডোরার বাঘও এলবিনো।

বিশ্বে সাদা বাঘ বিরল। তেমনি সাদা কুমির, গোলাপী ডলফিন, সাদা তিমি নিয়ে বেশ মাতামাতি। বিশেষ করে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জন্ম নেয়া ৪টিসহ মোট ৫টি বাঘ এখন দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে মাতামাতি হবে। কেন না বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশে সাদা বাঘের সংখ্যা কম। আর বাংলাদেশের প্রকৃতিতে সাদা রঙের বাঘের সংখ্যা যে বাড়ছে এটিই উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ১১ ও ৯ মাস বয়সী একটি বাঘ ও বাঘিনী আনা হয়েছিল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়। সেগুলোর নাম দেয়া হয়েছিল রাজ ও পরী। যা ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই তাদের তিনটি ব্যাঘ্র শাবকের জন্ম দেয়। এর মধ্যে একটি ছানা ২০ জুলাই মারা যায়। বেঁচে থাকা দুটি ছানার মধ্যে একটি কমলা-কালো ডোরাকাটা আর অন্যটি সাদা-কালো (হোয়াইট টাইগার)। হোয়াইট টাইগারের নাম দেয়া হয় শুভ্রা। আর কমলা কালো ডোরাকাটাটি নাম দেয়া হয়েছিল ‘জয়া’। সূত্র: দেশ রূপান্তর, জনকণ্ঠ