সন্তানের আদর্শ কৈশোরের জন্য বাবা-মায়ের যা না করলেই নয়

জহুরুল হক
আগস্ট ৮, ২০২২

Share Now

একটি শিশুকে বড় হতে গেলে অনেকগুলো মাইলফলক পার হতে হয়। নবজাতক অবস্থা থেকে স্কুলগামী শিশুতে পরিণত হওয়া পর্যন্ত তাকে শৈশবের অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু শিশুর জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরিবর্তনগুলোর মধ্যে একটি হলো তার বয়ঃসন্ধিকালে প্রবেশ। এসময় তার শারীরিক পরিবর্তনের পাশাপাশি অনেক ধরনের মানসিক চ্যালেঞ্জও গ্রহণ করতে হয়।

ঠিক তখনই তার জীবন ও সম্পর্ক নিয়ে ধারণা, মানসিকতা এবং চিন্তাশক্তি বিকাশ পায়।

এ সময়টাতে বাবা-মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। বাবা-মা হিসেবে একজন পরিপক্ক কিশোর-কিশোরী গড়ে তুলতে অনেক বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। চলুন সেরকম কিছু বিষয় জানা যাক।

অটুট বন্ধন
বাবা-মা হিসেবে সন্তানের সাথে সম্পর্কের বন্ধন শক্তিশালী করা অপরিহার্য। বেড়ে ওঠার সময়গুলোতে তারা অনেকটা নিষ্পাপ থাকে।  নির্ভরশীলও থাকতে হয় বড়দের ওপর। সে সময় তারা আপনার সাহায্য ও পরামর্শ চাইতে পারে। এটিই আদর্শ সময় তার জীবনে আপনার ভূমিকা প্রতিষ্ঠিত করার। বাবা-মা হিসেবে সন্তানের সঙ্গে আপনাকে এমন সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, যাতে সে আপনাকে বন্ধু ভাবতে পারে। আপনার ওপর পূর্ণ বিশ্বাস করতে পারে। আপনার আশপাশে থেকে সে যেন নিরাপদ বোধ করতে পারে। তাদের কিশোর বয়সটাতে আপনি যতটা ঘনিষ্ঠ হতে পারবেন, তারা বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা পেতে ততটাই আপনার কাছে ফিরে আসবে। তাকে তার জীবনের অনেক অমসৃণ পথ পাড়ি দিতে হবে। তাই তার সাথে এমন একটি সম্পর্ক তৈরি করুন যাতে সে আপনার নৈকট্যে স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপদ বোধ করে।

শারীরিক স্বাস্থ্য ও মানসিক ক্ষমতা
শিশুকে সুস্থ এবং সবলভাবে লালন-পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে তার মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়াও সমানভাবে প্রয়োজন। কিশোর বয়স নানা রকম চ্যালেঞ্জে পরিপূর্ণ। এসময় তারা নানারকম শারীরিক এবং মানসিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়। এগুলো মোকাবেলা করার জন্য তাদের আগে থেকেই প্রস্তুত করা প্রয়োজন, যদিও কাজটা কঠিন। এসময় তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ শেখাতে হয়। তাদের অনূভুতি সম্পর্কে সবসময় বাবা-মায়ের কৌতূহলী থাকতে হবে। তারা যেন সহজেই আবেগ প্রকাশ করতে পারে। যদি তারা কোনো ধরনের চাপ অনুভব করে তাহলে তা শনাক্ত করে সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে। তাদের অনূভুতিগুলো মন দিয়ে শুনতে হবে এবং আলোচনা করে তাদের মনকে শান্ত রাখা জরুরি। এছাড়াও তাদের চিন্তার প্রক্রিয়া যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

মতামতের গুরুত্ব
বাচ্চারা সাধারণত খুব কৌতূহলী হয়ে থাকে। তাদের মনে সবসময়ই নানা প্রশ্ন, ধারণা এবং মতামত উঁকি দেয়। কিন্তু বেশিরভাগ কিশোর-কিশোরীর জন্য এগুলো প্রকাশ করা দুরূহ। বিশেষ করে যারা অন্তর্মুখী তারা ভাবতে পারে এগুলো প্রকাশ করা উচিত না। ফলে বাবা-মায়েদের উচিত তাদের স্পষ্টভাষী, আগ্রহী এবং নির্ভীক হতে উৎসাহ দেওয়া।  তারা যখন মতামত দেবে তখন সেটিকে গুরুত্ব দিন এবং তা প্রকাশ করুন। পাশাপাশি তাদের সমালোচনা গ্রহণ করতে শেখান।

নিজস্ব ভাবনা তৈরি
শিশুরা যখন কৈশোরে পা দেয় তখন তাদের আরও স্বাধীনতার প্রয়োজন হয়। এই সময় তাদের নিজেদের জায়গা দিতে হয়। যাতে নিজেরা নিজেদের মতো করে ভাবতে পারে। অনেক বাবা-মা এটি পছন্দ করেন না। কিন্তু এই সময় তাদের সুযোগ দেওয়া উচিত নিজের মতো করে ভাববার। এটিই মোক্ষম সময় নিজের পরিচয় এবং দায়িত্ববোধ তৈরি করার। কিন্তু অবশ্যই একটি সীমানা নির্ধারণ থাকতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে তার ওপর বিরূপ প্রভাব না পড়ে।

প্রযুক্তি ব্যবহারে দায়িত্বশীলতা
এখন প্রযুক্তির যুগ। ইন্টারনেট যেমন এ যুগের একটি বর, তেমনি এর ক্ষতির দিকও রয়েছে। তাই সবারই এটি সাবধানতার সাথে ব্যবহার করা উচিত। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে তো বলাই বাহুল্য। সাইবার বুলিং, হয়রানি, ফিশিং এর মতো অনেক অনলাইন হুমকি তাদের জন্য রয়েছে। যোগাযোগের জ্ঞান তাদের অনলাইনে এবং বাস্তব জগতে নিরাপদ রাখার মূল চাবিকাঠি। তাদের ডিজিটাল প্রযুক্তির কুফল সম্পর্কে জানাতে হবে। ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার স্বাস্থ্যকর ব্যবহার সম্পর্কে তাদের জ্ঞ্যান দিতে হবে। সেই সাথে অনলাইনে নানা হুমকি সম্পর্কে সচেতন করে গড়ে তোলা আপনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।  

শারীরিক আত্মবিশ্বাস
কৈশোরে সবাই তাদের সৌন্দর্য্যের ব্যপারে সচেতন থাকে। তাদের নিজেদের নিয়ে ধারণা থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ অন্যরা তাদের নিয়ে কী ভাবছে। যদি কোনো কারণে তাদের সৌন্দর্য্য, যোগ্যতা কিংবা অপর্যাপ্ততা নিয়ে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয় তাহলে এটি দীর্ঘমেয়াদে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই বাবা-মায়েদের উচিত বাচ্চাদের শারীরিক বিষয়ে ইতিবাচকতাকে উৎসাহিত করা। তাদের আত্মবিশ্বাস, নিজের প্রতি ভালোবাসা এবং নিজের যত্নের প্রতি সচেতন হতে হবে।