হিসাব করে জাকাত দিন, সম্পদ রাখুন পবিত্র

মোঃ আশিকুর রহমান
এপ্রিল ২৬, ২০২২

Share Now

জাকাত মানে পবিত্রতা ও প্রবৃদ্ধি; রমজান মানে আগুনে পুড়ে সোনা খাদমুক্ত খাঁটি করা। রমজানের সঙ্গে জাকাতের সুনিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আল-কোরআনে নামাজের নির্দেশ যেমন ৮২ বার রয়েছে, অনুরূপ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাকাতের নির্দেশনাও রয়েছে ৮২ বার।

আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদে বলেন- ‘মুত্তাকিগণ জান্নাতে ফোয়ারার নিকটে থাকবে। তারা গ্রহণ করবে যা তাদের পালনকর্তা তাদেরকে দেবেন। নিশ্চয় ইতিপূর্বে তারা ছিল সৎকর্ম পরায়ণ, তারা রাত্রির সামান্য অংশেই নিদ্রা যেত, রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং তাদের ধনসম্পদে ছিল প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক বা ন্যায্য অধিকার।’ (সুরা-৫১ জারিয়াত, আয়াত: ১৫-১৯)।

পবিত্র কোরআনে আরও বলা হয়েছে, ‘(হে রাসূল!), আপনি তাদের সম্পদ থেকে সাদাকা (যাকাত) গ্রহণ করে তাদেরকে পূত-পবিত্র করুন এবং তাদের জন্যে (তাদের সম্পদে) প্রবৃদ্ধি ঘটান।’ (সূরা তাওবা-হ : ১০৩)

রমজানের যেকোনো একটি দিনকে সমাপনী দিন ধরে জাকাতযোগ্য খাতসমূহের সব সম্পদের হিসাব করে জাকাত নির্ধারণ করতে হবে। জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য অন্তত নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক চান্দ্রবৎসর (৩৫৪ দিন) থাকতে হবে। সম্পূর্ণ সম্পদের বছর অতিক্রান্ত হওয়া শর্ত নয়।

নিসাব হলো সাড়ে সাত ভরি সোনা, সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা এর কোনো একটির সমমূল্যের নগদ টাকা বা ব্যবসার পণ্য। বিনিময়যোগ্য বৈদেশিক মুদ্রা, ট্রাভেলস চেক, ব্যাংক চেক, ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার, পোস্টাল অর্ডার, মানি অর্ডার, শেয়ার সার্টিফিকেট, কোম্পানি শেয়ার, ডিও লেটার, সঞ্চয়পত্র, সিকিউরিটি মানি, জামানত, প্রাইজ বন্ড, ট্রেজারি বন্ড ইত্যাদি; ব্যাংক বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখা আমানত; যেমন বিমা, কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট, মেয়াদি সঞ্চয়, কিস্তিতে জমা, এফডিআর, ফিক্সড ডিপোজিট, পোস্টাল সঞ্চয়ী, বিশেষ সঞ্চয়, পেনশন স্কিম ও অফিশিয়াল প্রভিডেন্ট ফান্ড, স্বেচ্ছা প্রভিডেন্ট ফান্ড, ডিভিডেন্ড, সমবায় সমিতি (এসব জাকাত হিসাব তারিখে নগদায়ন করলে যা পাওয়া যাবে); ফেরত পাওয়ার যোগ্য প্রদত্ত ঋণ, ব্যবসার পণ্য ও মূল্যবান শোপিস বা মূলবান পাথর—হীরা, জহরত, মণিমাণিক্য, মুক্তা ইত্যাদি (এসবের বর্তমান বাজারমূল্য অর্থাৎ বর্তমানে নতুন কিনতে যে মূল্য); শেয়ার সার্টিফিকেটের নামিক মূল্য ও বাজারদর হিসাবে ধরতে হবে।

সোনা, রুপা, নগদ টাকা ও ব্যবসায় পণ্য— এই তিন খাতে জাকাত বর্ষপূর্তি বা জাকাত হিসাব সমাপনী দিনে যত সম্পদ থাকবে, পুরোটারই জাকাত দিতে হবে। বছরের মধ্যে যেকোনো সময় অর্থাগম ঘটলে বছর শেষে জাকাত প্রদান করতে হবে। যেদিন অর্থসম্পদ নিসাব পর্যায়ে পৌঁছাবে, সেদিন থেকেই জাকাত বর্ষ গণনা শুরু হবে।

নিসাব পরিমাণ ও তদূর্ধ্ব সম্পদের মালিক তাঁর জাকাতযোগ্য সব সম্পদের জাকাত প্রতিবছর আড়াই শতাংশ (৪০ ভাগের ১ ভাগ) হারে প্রদান করতে হয়। চান্দ্রবর্ষ ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিনে হয়। যেহেতু সৌরবর্ষ ৩৬৫ দিনে বা ৩৬৬ দিনে হয়, তাই সৌরবর্ষ অপেক্ষা চান্দ্রবর্ষ ১০ বা ১১ দিন কম।

সৌরবর্ষ হিসেবে জাকাত প্রদান করতে চাইলে শতকরা ২.৫ শতাংশের পরিবর্তে ২.৫৮ শতাংশ দিতে হবে। অথবা মূল জাকাতের সঙ্গে অতিরিক্ত ১১ দিনের হিসাব যোগ করতে হবে। অনুরূপ কারও জাকাত সমাপনী হিসাব তারিখ রমজানে না হলে, তিনি অতিরিক্ত সময়ের জাকাত সমন্বয় করে জাকাত হিসাব তারিখ রমজানে নিয়ে আসতে পারেন।

জাকাত বর্ষপূর্তি বা জাকাত হিসাব সমাপনী দিনে সোনা, রুপা, নগদ টাকা ও ব্যবসাপণ্য— এ তিন খাতে যত সম্পদ থাকবে, পুরোটারই জাকাত দিতে হবে। বছরের মধ্যে যেকোনো সময় অর্থাগম ঘটলে, বছর শেষে জাকাত প্রদান করতে হবে। প্রতিবছর একই তারিখে ও একই সময়ে জাকাতের হিসাব করতে হয়। যেমন: ১ রমজান সন্ধ্যা ছয়টা। এই সময়ের এক সেকেন্ড আগে যে সম্পদ আসবে, তা জাকাত হিসেবের অন্তর্ভুক্ত হবে। এই সময়ের এক সেকেন্ড পরে যে সম্পদ আসবে, তা পরবর্তী বছরের হিসাবে যাবে।

জায়গাজমি, বাড়ি ও গাড়ি, যা বিক্রির জন্য রাখা হয়নি, তা জাকাত হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে না। গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট ও জমি, যেগুলো বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে, সেগুলোর বর্তমান বিক্রয়মূল্য (বাজারদর) জাকাতের হিসাবে আসবে এবং এর মূল্য হিসাব করে প্রতিবছর জাকাত দিতে হবে।

জাকাত প্রদান করতে গিয়ে আত্মপ্রচারণা ঠিক নয়। ব্যানার ঝুলিয়ে মাইকিং করে জাকাত প্রদান করা মোটেই সুন্নতসম্মত নয়। জাকাত প্রদান করতে গিয়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার জাকাত দাতাকেই নিতে হবে। যথা: কেউ আহত হলে তার চিকিৎসা ব্যয় ও পরিবারের ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নিতে হবে। কেউ নিহত হলে; ‘কতলে খতা’ বা অনিচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ডের জন্য তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।