যশোরে উদ্ধার হওয়া ‘কঙ্কালের’ রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। উদ্ধার হওয়া কঙ্কালটি অটোরিকশাচালক বিল্লাল হোসেন মিয়াদের। অটোরিকশার লোভে তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। পরে তার অটোরিকশাটি বিক্রি করে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। 

এ সময় বিল্লাল হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার বিকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঞ্জুরুল ইসলামের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে গ্রেফতার দুজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

গ্রেফতাররা হলেন- পৌর শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়া কাঁঠালতলা এলাকার তোতা মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া জাহিদুল ইসলাম মিঠুর ছেলে আব্দুল কাদের ও একই এলাকার তিতাসের বাড়ির ভাড়াটিয়া ইউনুস আলীর ছেলে জুয়েল শেখ। নিহত বিল্লাল হোসেন মিয়াদের বাড়ি বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ছোট বাদুড়া গ্রামে হলেও ১১ বছর আগে বিয়ে করে যশোর সদরের পাগলাদাহ গ্রামে বসবাস করে আসছিলেন।

পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানান, বিল্লাল ২১ জুন দুপুরে অটোরিকশায় যাত্রী নিয়ে পুরাতন কসবা এলাকায় যান। আব্দুল কাদের ওই সময়ে বিল্লালের কাছ থেকে তার মোবাইল ফোন নম্বর নেন। সন্ধ্যায় তাকে ফোন করে কাঁঠালতলায় দেখা করতে বলেন কাদের। নারীর সঙ্গে অনৈতিক মেলামেশার প্রস্তাব দিয়ে বিল্লালকে খিতিবদিয়া গ্রামে জুয়েলের বোনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই বাড়িতে রিকশা রেখে তিনজনে ষোল বিঘা মাঠের মধ্যে রেজাউল সরদারের মেহগনি বাগানে গিয়ে ইয়াবা সেবন করেন।

তিনি আরও বলেন, এ সময় জুয়েল ও কাদের বিল্লালের গলায় দড়ি টেনে ধরেন। বিল্লাল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে গামছা দিয়ে তার হাত ও পা বেঁধে ফেলেন। কাদের কোমরে থাকা ছুরি দিয়ে বিল্লালের বুকে আঘাত করেন। পরে কাদেরের কাছ থেকে ওই ছুরি নিয়ে জুয়েল বিল্লালের গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। বিল্লালের কাছে থাকা মোবাইল ফোনটি পাশের একটি পাট ক্ষেতে ফেলে রিকশাটি নিয়ে কাদের বোনের বাড়ি শহরতলীর শেখহাটি জামরুলতলা রেখে আসেন। পরে রিকশা থেকে ব্যাটারি খুলে নিয়ে ৮ হাজার ১৫০ টাকায় ঘোপ জেল রোডের এক ব্যক্তির কাছে এবং রিকশার বডি শেখহাটি এলাকার একজনের কাছে বিক্রি করেন তারা। 

বিল্লাল বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে না আসায় বিভিন্ন জায়গায় খুঁজতে থাকেন স্বজনরা। সন্ধান না পেয়ে ২২ জুন বিল্লালের শাশুড়ি বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এর সূত্র ধরে ২৭ জুন পিবিআইর এসআই ডিএম নুর জামাল চুড়ামনকাটি এলাকার একটি পাট ক্ষেত থেকে বিল্লালের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করেন। ৩ জুলাই খিতিবদিয়া গ্রামের ষোল বিঘার মাঠ থেকে বিল্লালের কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ। 

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে, মরদেহটি ১০ থেকে ১৫ দিন আগের ছিল। ১৬ জুলাই কাদের এবং জুয়েলকে আটক করে পিবিআই। তারা বিল্লালকে হত্যার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করে। তাদের দেখানো মতে বিল্লাল হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি এবং ব্যাটারি ও রিকশা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওইদিন নিহতের স্ত্রী শারমিন আক্তার কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। রোববার আদালতে হাজির হয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।