কালিয়াকৈর প্রতিনিধি

১৭ মাস অর্থাৎ প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও কালিয়াকৈর উপজেলার ১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২০টি কিন্ডারগার্টেন খোলার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

গত তিন সপ্তাহ ধরে চলা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ইতিমধ্যে কালিয়াকৈর উপজেলা ১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২০টি কিন্ডারগার্টেন মাঠে পানি উঠেছে। যে কারণে ১২ সেপ্টেম্বর এই উপজেলার ১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২০টি কিন্ডারগার্টেন খোলা অনিশ্চিত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানা গেছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় মোট ১২২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫টি কলেজ, ৮টি স্কুল এন্ড কলেজ ও ৮টি মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার ২টি ইউনিয়নে নিম্নাঞ্চলে ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্ষার পানি ঢুকেছে। কোনো কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এবং আবার কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে পানি ঢোকার উপক্রম হয়েছে। প্রতিদিন কমবেশি বৃষ্টি হচ্ছে এবং পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

কয়েকদিন বর্ষার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে পানি প্রবেশ করবে বলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা জানিয়েছেন।

সরেজমিন উপজেলার বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুদি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শেওড়াতলি বালিকা বিদ্যালয়, ঢালজোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাংগুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুরাগ নদীর তীরে অবস্থিত কুন্দাঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা গেছে, বর্ষার পানিতে এইসব বিদ্যালয়ের মাঠ থৈ থৈ করছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে পানি ঢুকবে। প্রতিনিয়ত পানি বৃদ্ধির কারণে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার ব্যাপারে অনেকটাই অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

অপরদিকে উপজেলার ১২২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১০৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫টি কলেজ, ৮টি স্কুল এন্ড কলেজ ও ৮টি মাদ্রাসা খোলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের নতুন করে বরণ করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অপেক্ষার প্রহর গুণছে।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার ফুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লতিফপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মৌচাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আক্কেল আলী উচ্চ বিদ্যালয়, মৌচাক স্কাউট স্কুল এন্ড কলেজ, সফিপুর আইডিয়াল পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, শাহীন স্কুল এন্ড কলেজ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ভবন, বেঞ্চ, জানালা-দরজা মেরামত, রঙকরণ, বেসিন স্থাপনসহ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

শাহীন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফাতিহা উঞ্জিলা বলেন, স্কুল খোলার কথা শুনে আনন্দ লাগছে। আমরা আবার আগের মতো স্কুলে যেতে পারবো। বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করতে পারবো।

ঢোলসমুদ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মেহেরুন্নেসা খানম বলেন, এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুল পরিচালনার জন্য সকল প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমিতা ইসলাম বলেন, এরই মধ্যে উপজেলার ১০৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের পাঠদানের প্রস্তুতি রয়েছে। আমাদের ১৯টি বিদ্যালয়ের মাঠে পানি। বৃষ্টির পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, সারাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো আমাদের উপজেলায় ১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যতীত বাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হবে।

কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বাকি ১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পানি ওঠার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।