কক্সবাজারে আটকা অর্ধলাখ পর্যটক

তাহানুল মারুফ
নভেম্বর ৬, ২০২১

Share Now

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে হঠাৎ গণপরিবহণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় কক্সবাজার বেড়াতে এসে শুক্রবার ফিরে যাওয়ার শিডিউল থাকা প্রায় অর্ধলাখ পর্যটক আটকা পড়েছেন। শনিবার যাদের বিশেষ কাজ রয়েছে সেসব পর্যটকদের অনেকে অতিরিক্ত ভাড়ায় উড়োজাহাজে কক্সবাজার ছেড়েছেন। যাদের সেই সামর্থ্য নেই তারা ছোট যানবাহনে কক্সবাজার ছাড়ার চেষ্টা চালান সারা দিন। অন্য সময়ের চেয়ে ভাড়া দু-তিনগুণ হওয়ায় বিকাল পর্যন্ত তারা কক্সবাজার ছাড়তে পারেননি।

সপ্তাহিক ছুটির দিন হিসাবে শুক্র ও শনিবার হাতে রেখে কক্সবাজার এসেছেন লাখ লাখ পর্যটক। অনেকে পূর্বের নির্ধারিত সময়ানুসারে কক্সবাজার এসেছেন বৃহস্পতিবার। আবার শুক্রবার ভোরেও পৌঁছান অনেকে। যারা শুক্রবার ফিরে যাওয়ার শিডিউলে ছিলেন তারা এসেছিলেন আরও কয়েকদিন আগে। এ ধরনের পর্যটক অর্ধলাখ হবে বলে জানান হোটেল সংশ্লিষ্টরা। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় তারা নির্ধারিত সময়ে কক্সবাজার ছেড়ে যেতে পারেননি। আবার পূর্ব থেকে হোটেল রুম বুকিং দিয়ে যাদের শুক্রবার বিকালে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় কক্সবাজার ভ্রমণে আসতে পারেননি প্রায় ৩০ হাজার পর্যটক। অর্ধলক্ষাধিক পর্যটক শুক্র ও শনিবারের জন্য হোটেলের কক্ষ অগ্রিম বুকিং দিয়েছিলেন। কিন্তু রাতের বাস ও নিজস্ব গাড়িতে যাত্রা করা ২০ হাজারের মতো শুক্রবার ভোরে কক্সবাজার পৌঁছালেও ভোরে যাত্রা করার কথা ভাবা অন্য পর্যটকরা শেষমেশ আসতে পারেননি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আমিরুল ইসলাম বউ নিয়ে ফেনী থেকে কক্সবাজার আসেন মঙ্গলবার। রোববার আবারও প্রবাসে ফিরে যাবেন বলে শুক্রবার সকালের বাসে কক্সবাজার ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সকালে হোটেল ছাড়লেও বাসে কক্সবাজার ছাড়তে পারেননি। রোববার বিদেশের ফ্লাইট ধরতে না পারলে বিমানের বিপুল টাকা লস যাবে। এ কারণে বেলা ৩টার বিমানে কক্সবাজার ছেড়ে যেতে টিকিট নিয়েছেন। দুপুর ১২টার দিকে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে আরও অনেকে সকালে যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় থেকেও যেতে পারেননি।

কক্সবাজার তাজ করপোরেশন অ্যান্ড ট্রাভেলস সেন্টারের মালিক জানে আলম বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে অনেকে টিকিট কাটেন, আবার অনেকে চাহিদার সঙ্গে দামের সামঞ্জস্য না হওয়ায় টিকিট কাটেননি। সুগন্ধা পয়েন্টে কথা হয় সিলেট থেকে আসা নবদম্পতি নোমান শরিফ ও নাবিলা শরিফের সঙ্গে। সকালে চট্টগ্রাম গিয়ে ট্রেনে সিলেটে ফেরার কথা ছিল তাদের। কিন্তু স্বপ্নের কক্সবাজারে হানিমুনটা শেষ বেলায় এসে বেদনায় ভরে দিয়েছে পরিবহণ ধর্মঘট। ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, হঠাৎ দূরপাল্লার বাস বন্ধ হওয়াতে পর্যটকরা চরম বেকাদায় পড়েছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও। বাড়ি ফেরার আশায় আনুমানিক ৩০ থেকে ৫০ হাজার পর্যটক হোটেল ছেড়ে দিয়েছেন। শুক্রবার রাতে যদি বাস খুলে দেওয়া না হয় তাহলে এসব পর্যটক চরম বেকায়দায় পড়তে পারেন। বাস বন্ধ থাকায় বিপুল পরিমাণ পর্যটক কক্সবাজারে আসতে পারেননি।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ ইসলাম বলেন, পর্যটক আটকা পড়ার বিষয়টি প্রশাসনকে কেউ জানায়নি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। শুক্রবার রাতে অবস্থা দেখে আটকা পড়া পর্যটকদের বিষয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।