দলটার মাঝে এক অদ্ভুত অস্থিরতা : ফাহিম

মোঃ আশিকুর রহমান
আগস্ট ৪, ২০২২

Share Now

এবার যা হয়েছে বা হলো, তা হয়নি অনেক দিন। দুর্বল জিম্বাবুয়ের কাছে যে কোনো ফরম্যাটে দীর্ঘকাল সিরিজ হারেনি বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, টি-টুয়েন্টিতেতো কখনোই সিরিজ হারেনি টাইগাররা। যদিও এবারই প্রথম পরাজয় ঘটল টিম টাইগার্সের।

কেন এ লজ্জার হার? কোন দুর্বলতার কারণে হারতে হলো লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের? অভিজ্ঞ, পরিণত আর তারকাদের ছাড়া একঝাঁক তরুণে গড়া টাইগারদের না পারার কারণটা আসলে কি? ভক্ত ও সমর্থকরা সকলেই এবার সে কারণটাই খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

জিম্বাবুয়ের কাছে টি-টুয়েন্টি সিরিজে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে আসলে কেন পারলো না বাংলাদেশ? গণমাধ্যমের সঙ্গে একান্ত আলাপে সে কারণগুলোই খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন দেশের বর্ষীয়ান কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম।

টাইগারদের পরাজয়ের কারণ খুঁজতে গিয়েও নিজ সন্তানতুল্য খেলোয়াড়দের শক্তি ও সামর্থ্যকে একটুও খাটো করে দেখেননি ফাহিম। তির্যক সমালোচনার বদলে প্রকৃত কারণ বের করার চেষ্টায় থাকা বিকেএসপির বর্তমান প্রধান টেকনিক্যাল উপদেষ্টা একবারের জন্যও বলেননি, তরুণে ঠাঁসা এ দলটির কোনো মেধা কিংবা যোগ্যতা নেই। বরং তার দাবি, প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে আহামরি কোনো দল নয়। যদিও এই টি-টুয়েন্টি সিরিজে জিম্বাবুয়ে একটা সাজানো গোছানো দল হিসেবেই বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নেমেছে।

সামগ্রিকভাবে জিম্বাবুয়ের বর্তমান দলটির যা সামর্থ্য, তাতে তারা ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট অর্থাৎ প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ ৩ থেকে ৪টি দলকে হারানোর যোগ্যতাও রাখে না। এ নিয়ে ফাহিম বলেন, সত্যি কথা বলতে, জিম্বাবুয়ে আমাদের ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের মানের দল। আমাদের প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের অন্তত তিন থেকে চারটি দল আছে, যাদের শক্তি ওই দলটির চেয়ে অনেক বেশি; কিন্তু আফসোস এমন এক কমজোরি দলের কাছেও আমরা হেরে গেলাম। আমরা জেতার খেলা বহুদূরে, একটা ইউনিট হয়েও খেলতে পারলাম না।

এমন একটি দলের বিপক্ষে কেন পারলো না তরুণে ঠাঁসা বাংলাদেশ? ফাহিম ব্যাখ্যা করে বলেন, আসলে আমরা এমন একটা পরিবেশ তৈরি করেছি যে, পুরো দল ভুগছে এক অদ্ভুত অস্থিরতায়। কখন কী হবে? যদি ভাল না খেলি, নিজেকে মেলে ধরতে না পারি তাহলে দলে থাকব কি-না, নতুনদের প্রায় সবাই এমন অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। আবার কারো কারো ভিতরে নিজেকে মেলে ধরার তাগিদ। তারা কেবল নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চিন্তায় মশগুল।

তার মতে, তাই দল হয়ে খেলার চেয়ে সবাই নিজেকে নিয়ে চিন্তিত। কি হয়, কি হবে- এই ভেবেই যেন সবাই অস্থির। এমন অবস্থা বিরাজ করলে কখনো অন্তত দল হয়ে খেলা যায় না। আমাদের ক্রিকেটাররাও একটি দল হয়ে খেলতে পারছে না।

ফাহিম যোগ করেন, চারদিক থেকে একটা বার্তা গেছে এবং যাচ্ছে যে- আমরা নাকি টি-টুয়েন্টি পারি না। আমার মনে হয়- দলে এটাও একটা খারাপ প্রভাব ফেলেছে। মোট কথা, একটা নেগেটিভ হাইপ উঠে গেছে। সেটা ভীষণই ক্ষতিকর। আস্থা ও আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়ার কারণও এটা।

ওপেনার লিটন দাস রান করলে রান হয়। আর না করলে হয় না। মাঠের পারফরমেন্স বিশেষ করে ব্যাটিংটা প্রত্যাশিত মানের না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ফাহিম বলেন, ব্যাটারদের দেখে মনে হচ্ছে তাদের মাঝে কাজ করছে ব্যর্থ হওয়ার ভয়-ভীতি। বেশিরভাগই ভয়ে ভয়ে খেলছে যে, যদি রান কম করে আউট হয়ে যাই, তাহলে হয়তো আর চান্স পাব না। বাদ পড়ে যাব। সম্ভবত এসব চিন্তা থেকে ঝুঁকি নিয়ে শটস খেলা এবং হাত খুলে আক্রমণাত্মক উইলোবাজি করতে দেখলাম না কাউকে।

তার মতে, সবাই নিরাপদ থেকে ১০৫ থেকে ১১০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করলো। কেউ একটু ঝুঁকি নিয়ে স্ট্রাইক রেটটা ১৪০ বা দেড়শর ওপরে নেওয়ার চেষ্টা করলো না। কালকে আফিফ আর রিয়াদ খেলল ওই বল পিছু রান করে। মাঝখানে কেউ একজন একটু সাহস ও ঝুঁকি নিয়ে হাত খুলে খেললেই হয়তো হয়ে যেত; কিন্তু কেউ সে চেষ্টা করল না। ওই আগ্রাসনটাই কারো মাঝে দেখা গেল না।