বড় জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের

তাহানুল মারুফ
মার্চ ২৯, ২০২৩

Share Now

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে সংক্ষিপ্ত স্কোর: আয়ারল্যান্ড ১৭ ওভারে ১২৫/৯ (লক্ষ্য ২০৩) (হোয়াইট ২*, হিউম ২০*; ক্যাম্ফার ৫০, হ্যান্ড ২, মা. অ্যাডায়ার ৬, টেক্টর ২২, ডকরেল ২, ডিলানি ৬, র. অ্যাডায়ার ৬, টাকার ৬, স্টার্লিং ০)

বাংলাদেশ ১৭ ওভারে ২০২/৩ (নাজমুল হোসেন শান্ত ২*, সাকিব ৩৮*; লিটন দাস ৮৩, রনি তালুকদার ৪৪, তাওহীদ ২৪)।

লিটন দাসের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ২০২ রানের বড় সংগ্রহ করে। বৃষ্টির কারণে ইনিংস কমে আসে ১৭ ওভারে। লক্ষ্যে নেমে আয়ারল্যান্ড এবার শুরু থেকে নাস্তানাবুদ হয়েছে। তাসকিন আহমেদ ওপেনিং জুটি ভাঙেন। তারপর সাকিব আল হাসানের স্পিন জাদু, ৪৩ রানে নেই ৬ উইকেট। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি দ্বিতীয়বার ইনিংসে পাঁচ উইকেটের দেখা পান বাংলাদেশের অধিনায়ক। 

এরপর আয়ারল্যান্ড লড়াই শুরু করে কার্টিস ক্যাম্ফারের ব্যাটে। ২৯ বলে পঞ্চাশও করে ফেলেন আইরিশ ব্যাটার। তাকে ফেরান তাসকিন। ১৭ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৫ রানে থামে সফরকারীরা। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৭৭ রানে জিতে সিরিজও নিশ্চিত করে ফেলে বাংলাদেশ। দেশের ২০ ওভারের ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জয় পায় সাকিবরা। 

ফিফটি করে থামলেন ক্যাম্ফার

স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে কার্টিস ক্যাম্ফার হাফ সেঞ্চুরি করেন। ১৫তম ওভারের পঞ্চম বলে তাসকিনকে ছক্কা মেরে ফিফটি করেন তিনি, পরের বলে হন আউট। ২৯ বলে তিনটি করে চার ও ছয়ে পঞ্চাশ করেন আইরিশ ব্যাটার। 

হাসানের পর তাসকিনের আঘাত, জয়ের আরও কাছে বাংলাদেশ

সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণি  জাদুর পর চার ওভার কোনও উইকেট নেই। অবশেষে ১১তম ওভারে হাসান মাহমুদ পেলেন আয়ারল্যান্ডের সপ্তম উইকেটের দেখা। মার্ক অ্যাডায়ারকে ৬ রানে পেছনে লিটন দাসের ক্যাচ বানান তিনি। ৭৪ রানে ৭ উইকেট নেই আইরিশদের। এরপর তাসকিন আহমেদ ফেরান ফিওন হ্যান্ডকে (২)। 

রেকর্ড গড়ার পর সাকিব নিলেন পঞ্চম উইকেট

২০৩ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়ে প্রথম বলেই আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ। দারুণ গতিময় এক বলে অধিনায়ক পল স্টার্লিংকে শূন্য রানে লিটনের গ্লাভসবন্দি করিয়েছেন। সাকিব আল হাসান বল হাতে নিয়ে সাফল্য পান। ৪৩ রানের মধ্যে ৬ উইকেট পায় বাংলাদেশ, পরের পাঁচটিই অধিনায়কের। সাকিবের প্রথম শিকার লরকান টাকার। ৫ বলে ৬ রান করে স্কয়ার লেগে রনি তালুকদারের সহজ ক্যাচ হন আইরিশ ব্যাটার। বাংলাদেশ অধিনায়ক তার পরের ওভারে জোড়া আঘাত করেন। দ্বিতীয় উইকেট পান রস অ্যাডায়ারকে ৬ রানে বোল্ড করে। এক ছক্কা মেরে গ্যারেথ ডিলানি (৬) লিটনকে ক্যাচ দেন।

প্রথম ২ ওভারে তিন উইকেট পান সাকিব। ওখানেই শেষ নয়। পরের ওভারে বাঁহাতি স্পিনার তৃতীয় বলে জর্জ ডকরেলকে (২) ফেরান। রিভিউ নিয়েও এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারেননি আইরিশ ব্যাটার। তাতে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক হন তিনি। ১৩৫তম উইকেট নিয়ে টিম সাউদিকে (১৩৪) পেছনে ফেলেছেন সাকিব। একই ওভারে হ্যারি টেক্টরকে ২২ রানে বোল্ড করে ফাইফারের দেখা পান অধিনায়ক। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ ৬ উইকেট পেয়েছে ৪৩ রানের বিনিময়ে।

এনিয়ে দ্বিতীয়বার টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেট পেলেন সাকিব। ২০১৮ সালে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নেন তিনি।

কার্টেল ওভারের ম্যাচে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২০২

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে টস হারলেও ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের ইনটেন্ট ছিল একই। লিটন-রনির রেকর্ড ওপেনিং জুটিতে ভর করে স্বাগতিকরা ২ উইকেটে ২০২ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে। দু’বারের বৃষ্টি বিরতির পর চট্টগ্রামে দুই ওপেনার শুরু করেন চার-ছক্কার বৃষ্টি। পাশাপাশি ওলট-পালট করেছেন রেকর্ডবুকও। বাংলাশের সেরা ওপেনিং জুটি উপহার দিয়েছেন তারা।১২৪ রানের জুটি ভাঙে রনির (৪৪) বিদায়ে। তার পর লিটন ঝড়ো ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন। কিন্তু বাজে শটে ৮৩ রানেই শেষ হয় তার ইনিংস। তার পর ইনিংসটা দুইশো ছোঁয়ার মতো অবস্থায় গেছে সাকিব-তাওহীদের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে। শেষ দিকে তাওহীদ দ্রুত রান তোলার তাড়ায় ২৪ রানে আউট হয়েছেন। তাতে ভাঙে সাকিব-তাওহীদের ৬১ রানের জুটি। সাকিব আল হাসান অপরাজিত থাকেন ৩৮ রানে। 

আইরিশদের হয়ে ২৮ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন লেগ স্পিনার বেন হোয়াইট। ৫২ রানে একটি শিকার মার্ক অ্যাডায়ারের। 

ঝড় তুলেও ৮৩ রানে থামলেন লিটন

টানা দ্বিতীয় ম্যাচে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন লিটন। আইরিশদের পাড়ার বোলার বানিয়ে ছুটছিলেন দ্রুত গতিতে। তাতে দেশের হয়ে দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির রেকর্ডও ভেঙেছেন। মনে হচ্ছিল ঝড়ো সেঞ্চুরিও বুঝি পেয়ে যাবেন। ১২তম ওভারের শেষ বলে মনোযোগ হারিয়ে বসেন তিনি। বেন হোয়াইটের অনেক বাইরের বল অহেতুক খেলতে গেলে ৮৩ রানে শেষ হয়েছে তার অসাধারণ একটি ইনিংস। লিটন যেভাবে খেলছিলেন তাতে সেঞ্চুরির সম্ভাবনাই উঁকি দিচ্ছিল। কিন্তু বাজে শট সিলেকশনে ৪১ বলে শেষ হয়েছে তার ইনিংস। তাতে ছিল ১০টি চার ও ৩টি ছয়ের মার।    

লিটন-রনি ঝড়ো ব্যাটিংয়ে আইরিশ বোলারদের নাভিশ্বাস তুলেছিলেন। তাতে এই ফরম্যাটে দেশের হয়ে সেরা ওপেনিং জুটিও উপহার দেন তারা। ১২৪ রানের রেকর্ড জুটি ভাঙে রনির বিদায়ে।

বেন হোইয়াটের বলে উঠিয়ে মারতে গিয়েছিলেন রনি। বল সরাসরি হাতে জমা পড়ে বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়ানো মার্ক অ্যাডায়ারের হাতে। তাতে ২৩ বলে ৪৪ রানে শেষ হয় রনির ইনিংস। তাতে ছিল ৩টি চার ও ২টি ছয়। 

ওপেনিং জুটিতেও লিটন-রনির রেকর্ড

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একের পর এক রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিও রেকর্ড বুক ওলট পালট হয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপ গড়েছেন লিটন-রনি। এই জুটিতে অষ্টম ওভারেই স্কোর একশো ছাড়িয়েছে। আগের ম্যাচে তারা ৯১ রান করেছিলেন। 

সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে ওপেনিংয়ে বাংলাদেশের সেরা জুটিটি ১০২ রানের। ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেটি করেছিলেন নাঈম শেখ ও সৌম্য সরকার।   

বাংলাদেশের দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির রেকর্ড লিটনের

লিটন-রনির বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতেই ৭৩ রান যোগ হয়েছে বাংলাদেশের। তার পরের ওভারে দেশের হয়ে দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির রেকর্ডও গড়েন লিটন। ১৮ বলে পূরণ করেছেন দশম ফিফটি। তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ৬ ওভারেই স্বাগতিকদের স্কোর দাঁড়ায় ৮৩। দেশের হয়ে আগের দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডটি ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের (২০ বলে)।  

দ্রুততম দলীয় ফিফটি

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামার পর শুরু হয়ে যায় লিটন-রনির তাণ্ডব। লিটনের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে চতুর্থ ওভারেই দলের স্কোর পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে। ২১ বলে পূরণ হয়েছে দলের ফিফটি। যা টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দ্রুততম। 

অবশ্য মার্ক অ্যাডায়ারের এই ওভারে শুরুর বলেই ফিরতে পারতেন লিটন। এই ব্যাটার পুল করার পর বল বাউন্ডারিতে থাকা ডকরেলের হাতে পড়েছিল। কিন্তু ঠিকমতো বল হাতে রাখতে না পারায় সেটি হয়ে যায় ওভার বাউন্ডারি।   

বৃষ্টিতে কার্টেল ওভারে গড়িয়েছে খেলা

টানা দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও টস জিতেছে আয়ারল্যান্ড। চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে আজও তারা শুরুতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ নিয়ে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে টানা ৫ ম্যাচে টস জয়ের সৌভাগ্য হয়েছে আইরিশদের। 

তবে টসের কিছুক্ষণ পরই শুরু হয়ে যায় বৃষ্টি। প্রায় ত্রিশ মিনিট বৃষ্টির পর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে রোদের দেখা মিলেছিল। মাঠ শুকানোর পর বিকাল সোয়া তিনটায় খেলা শুরুর ঘোষণাও আসে। কিন্তু সেই ঘোষণার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে না হতে আবার শুরু হয় বৃষ্টি। শুরুর ঘোষণায় ১৯ ওভারের ম্যাচ আয়োজনের কথা বলা হয়েছিল। দ্বিতীয় বৃষ্টি বিরতির পর অবশেষে খেলা শুরু হয় বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে। কার্টেল ওভারে ম্যাচ নেমে আসে ১৭ ওভারে। ফলে পাওয়ার প্লে কমে দাঁড়ায় ৫ ওভারে। দুজন সর্বোচ্চ ৪ ওভার বল করতে পারবেন।      

বৃষ্টিতে খেলা শুরু হতে দেরি

পুরো সকাল রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া থাকলেও ম্যাচ শুরুর হওয়ার ঘণ্টা খানেক আগে চট্টগ্রামের আকাশে শুরু হয় মেঘ-রোদের লুকোচুরি। টস শুরুর মিনিট খানেক আগেই শুরু হয় ঝড়ো বাতাস। তার মধ্যেই দুই দলের অধিনায়ক টস করেছেন। টস জিতে আইরিশ অধিনায়ক পল স্টার্লিং ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলে তার ১০ মিনিট পর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। 

বৃষ্টিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেটেও একটি ওয়ানডে পরিত্যক্ত হয়েছিল। তাতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোযাইটওয়াশ করা থেকে বঞ্চিত হয়েছে তামিম ইকবালের দল।

টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচেও ছিল একই অবস্থা। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে শুরু হয় বৃষ্টি। তাতে ম্যাচ গড়ায় কার্টেল ওভারে। শেষ পর্যন্ত ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ২২ রানে ম্যাচ জেতে।

বাংলাদেশ একাদশে কোনও পরিবর্তন নেই। তবে আয়ারল্যান্ড দলে একটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফাস্ট বোলার ক্রেইগ ইয়াংয়ের জায়গায় এসেছেন বোলিং অলরাউন্ডার ফিওন হ্যান্ড।  

বাংলাদেশ একাদশ: লিটন দাস, রনি তালুকদার, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, শামীম হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, নাসুম আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও হাসান মাহমুদ।

আয়ারল্যান্ড একাদশ: পল স্টার্লিং (অধিনায়ক), রস অ্যাডয়ার, লরকান টাকার, হ্যারি টেক্টর, কার্টিস ক্যাম্ফার, জর্জ ডকরেল, গ্যারেথ ডেলানি, মার্ক অ্যাডায়ার, ফিওন হ্যান্ড, গ্রাহাম হিউম ও বেন হোয়াইট। 

আরেকটি প্রথমের অপেক্ষায় বাংলাদেশ

আইরিশদের বিপক্ষে একের পর এক প্রথমের দেখা পাচ্ছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি সিরিজেও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রথম ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে রেকর্ড সংগ্রহ পেয়েছে। বৃষ্টি আইনে ২২ রানে জেতা ম্যাচটিতে প্রথম ৬ ওভারে পেয়েছে সর্বোচ্চ ৮১ রান। আজকের ম্যাচ জিতলে আরেকটি প্রথমের দেখা পাবে স্বাগতিক দল। এর আগে সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে কখনো টানা ৫ ম্যাচ জয়ের নজির ছিল না। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি জিতলেই এই প্রথম টানা ৫ ম্যাচ জয়ের নজির সৃষ্টি করবে। আগে দু’বার টানা ৪ ম্যাচ জয়ের নজির ছিল।