মহাকাশের পরিবেশ যে পৃথিবীর পরিবেশের মতো মানুষের জন্য আরামদায়ক নয় তা বলাই বাহুল্য। এই কারনেই মহাকাশচারীদের জীবনের নিরাপত্তা দেবার জন্য বিশেষ ভাবে তাপ-চাপ নিয়ন্ত্রিত পোশাক ব্যবহার করা হয়। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, এই স্পেস স্যুট ছাড়া মহাকাশে গেলে মহাকাশচারী সাথে সাথেই একটা সাবানের বুদবুদের মতো ফুটে যাবেন বা বিস্ফোরিত হবেন। আরেকটা ধারণা হলো, মহাকাশের প্রচন্ড ঠাণ্ডার মাঝে তিনি সাথে সাথে জমে বরফের টুকরায় পরিণত হবেন। এমন ভয়ঙ্কর পরিণতি হবার আশঙ্কা কি সত্যিই আছে?
সত্যি বলতে কি, স্পেস স্যুট ছাড়া মহাশূন্যে যাবার সাথে সাথেই মহাকাশচারীর বিস্ফোরিত হবার সম্ভাবনা নেই। মানুষের চামড়া চাপের তারতম্য সহ্য করার মতো যথেষ্ট শক্ত। আর জমে বরফ হবারও সম্ভাবনা নেই। কারণ মহাশূন্যে আপনার শরীর থেকে তাপ বেশ ধীরে সুস্থেই বের হবে। মহাশূন্যে বেশিক্ষণ থাকলে আপনার মৃত্যু নিশ্চিত তবে এক থেকে দুই মিনিটের মাঝে আপনাকে উদ্ধার করা হলে আপনার জীবন বেঁচে যাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ আছে।
স্পেস স্যুট ছাড়া মহাশূন্যে গেলে কি ঘটে আসলে? কয়েক ধরণের শারীরিক সমস্যা হতে শুরু করবে সাথে সাথেই, তবে এগুলো আপনাকে তৎক্ষণাৎ মেরে ফেলবে না। প্রথমেই যা হবে তা হল প্রায় চাপ-বিহীন পরিবেশে আপনার ফুসফুস এবং পরিপাকতন্ত্রের মধ্যে থাকা বাতাসের আয়তন বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এমন অবস্থায় আপনি যদি মনে করেন যে দম আটকে রেখে নিজের জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনাও বাড়াবেন, তবে সেটা হবে ভীষণ ভুল! পৃথিবীতে আমরা কয়েক মিনিট দম আটকে রাখতে পারি বটে কিন্তু মহাশূন্যে দম আটকে রাখতে গেলে সেটা আমাদের ফুসফুসের ভেতরে বাতাস আকারে বৃদ্ধি পেয়ে ফুসফুস ফেটে যাবে এবং রক্তপ্রবাহের ভেতরে বাতাস চলে যাবে, ফলে মৃত্যু হবে নিশ্চিত ও যন্ত্রণাদায়ক। আর আপনি যদি স্পেস স্যুট ছাড়া মহাশূন্যে গিয়ে পড়ে ভয়ে চিৎকার দেন তবে ফুসফুসের ভেতর থেকে এই অতিরিক্ত বাতাস বের হয়ে আপনার বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেবে। তবে খুব বেশিক্ষনের জন্য নয় কারণ মহাশূন্যে আমাদের শরীরে থাকা অক্সিজেন খরচ হয়ে যায় ১৫ সেকেন্ডের মাঝেই।